বন্দর-টার্মিনাল গড়ার চুক্তি বাতিলের পর ভারতের সাথে সম্পর্ক সাম্প্রতিকালে আরও অবনতি হয়েছে শ্রীলঙ্কার। তামিল ইস্যুতেও দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন রয়েছে। ফলে ভারতের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে চাইছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান।চীনের সাথে জোটবদ্ধ পাকিস্তান এখন দক্ষিণ এশিয়ায় বড় ত্রীড়ানক। দেশটিকে ভূ-রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী imran khan এরই অংশ হিসেবে দু’দিনের সফরে গিয়ে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে ৫ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব করেছেন তিনি। তার এ সফরে পর্যটন ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হয়েছে। উভয় দেশই ১০০ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বিষয়ে জোরালো আলোচনা করেছেন।পকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন বলেছে, প্রধানমন্ত্রী imran khanদু’দিনের সফর শেষ করেছেন। তার আগে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে জানানো হয়েছে, অভিন্ন নিরাপত্তা, সন্ত্রাস, সংগঠিত অপরাধ, মাদক, পাচার সহ গোয়েন্দা তথ্য শেয়ারে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব থাকবে উভয় দেশের মধ্যে। প্রতিরক্ষা বিষয়ক স্টাফ পর্যায়ের আলোচনা দুই দেশের প্রতিরক্ষা খাতের বিস্তৃতি বৃদ্ধিতে সুযোগ তৈরি করবে বলে এতে বলা হয়েছে।বিবৃতি অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কায় খেলাধুলাকে এগিয়ে নিতে ৫ কোটি ২০ লাখ রুপি দিতে চেয়েছে পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার স্পোর্টস বিষয়ক কমিউনিটির সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে imran khan ঘোষণা দিয়েছেন কলম্বোতে imran khanহাই পারফরর্মেন্স স্পোর্টস সেন্টার স্থাপনে অর্থ দেবে পাকিস্তান। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার অবকাশ কেন্দ্র ক্যান্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব পেরাডেনিয়া’তে এশিয়ান সিভিলাইজেশন অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন তিনি।বুধবার পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কনফারেন্সে ভাষণ দেয়ার সময় কাশ্মীর ইস্যুও তুলে ধরেন imran khan। ওই অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে এই অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে। এছাড়া ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে যা মানুষের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে আসবে।প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতকে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন imran khan। তবে তাতে কোনও ফল আসেনি। মতপার্থক্য দূর করতে শান্তিপূর্ণ আলোচনার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেছেন imran khan। তিনি বলেন, এই উপমহাদেশের সব সমস্যা আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা কমাতেও পাকিস্তানে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।এসময় তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে এই অঞ্চলের দেশগুলোর দারিদ্র্য দূর করতে পারে। এজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি জোট গড়ে তোলারও প্রস্তাব দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।সম্প্রতি এ দুটি দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা হয়। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন পর্যায়ে বৈঠক হয়। বৈঠক হয় বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে। এতে দু’দেশের মধ্যে নিয়মিত এমন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা হাইয়ার এডুকেশন কোঅপারেশন কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসাখাতে (এমবিবিএস এবং বিডিএস) ১০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান।এই সফরে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের সঙ্গে প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করেন imran khan। এ সময়ে তিনি শ্রীলঙ্কার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পাকিস্তানের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক সংযোগ, মানব সম্পদের উন্নয়ন, শিক্ষা ও প্রযুক্তি সহযোগিতার বিস্তৃত ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে যুক্ত থাকার ঘোষণা দেয় দুই দেশ। ওদিকে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কনফারেন্সে উভর দেশ ১০০ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সুবিধা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে। একই সঙ্গে তারা পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) আরো গভীর করার জন্য কাজ করতে একমত হন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী imran khan ও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে যৌথভাবে স্বীকার করেন শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ এসোসিয়েশন পুনর্গঠনের বিষয়ে।এর আগে, ভারতের সঙ্গে বন্দর-টার্মিনাল গড়ার চুক্তি বাতিল করে শ্রীলঙ্কা। বন্দরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ চলছিল সেখানে। তাতেই শেষমেশ চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাহিন্দা রাজাপক্ষে সরকার। ওই বন্দরে বিনিয়োগ করার কথা ছিল আদানি গ্রুপের। পাশাপাশি, বর্তমান প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা তামিলরাও ভারতের বিরুদ্ধে সুর তুলছেন। ভারতের তামিলদেরকেও তারা নিজেদের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করেন। ভারতের তামিলরাজ্যের স্বায়ত্ব শাসনের দাবিতে তারা যুদ্ধও করেছেন। ফলে শুরু থেকেই ভারতের বিরোধী তারা।এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সক্রিয় সহযোগিতার প্রস্তাব শ্রীলঙ্কার জন্য খুবই সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের হঠকারী আচরণের কারণে তাদের জন্য একটি ভাল বিকল্প হয়ে দেখা দিচ্ছে পাকিস্তান। ফলে ইমরানের খানের হাত মাহিন্দা রাজাপক্ষে শক্তভাবেই ধরবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।