মাছে ভাতে বাঙালি আমরা । দেশের নদী, খাল, বিল আর পুকুরে মিলে নানান ধরনের মাছ। মাছ ভাজা, মাছের মুড়িঘন্ট, চচ্চরি এসব বাঙালির নিত্য দিনের আহার। আর ভোজন রসিক বাঙালির জন্য এবার মাছের গুণাগুণ ঠিক রেখে তৈরি করা হয়েছে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাছের পাউডার।খাবারের সাথে মিক্সড করে খাওয়া যায় এই ফিস ফাউডার।
সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) একদল গবেষক তৈরি করেছেন এ মাছের পাউডার। খাদ্য নিরাপত্তার সকল মানদণ্ড বজায় রেখে মাছের পাউডারটি তৈরি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ল্যাবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল পিবিআরজি উপ-প্রকল্প এর অর্থায়নে অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ২০২০ সালের মে মাস থেকে চাপিলা মাছের এই পাউডার তৈরিতে কাজ শুরু করেন গবেষক দল। ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে পাউডার তৈরিতে সফল হওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে গত ৪ মাস থেকে নিত্যদিনের তরকারির ডাল, আলু, কচুর শাক, লাল শাক, বেগুন, সিম, লাউ, চাল কুমড়া, ফুলকপি, মুলা, ভর্তা ও কচুরমুখীতে ফিশ পাউডারের ব্যবহার শুরু করা হয়।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী, লক্ষীপুরের চর আলেকজান্ডার ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার ১২০টি পরিবারের প্রায় ৬ শতাধিক সদস্যদের মাঝে সাপ্তাহিক জনপ্রতি ৪০গ্রাম করে ১৬সপ্তাহে এ পাউডার বিতরণ করা হয়।
গবেষণার কাজে ২৪০টি পরিবারের কিশোরী মেয়েদের রক্তের নমুনায় আয়রণ, জিংক, ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়েছে। আগামী মার্চ মাসে পুন:মুল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ।
মাছের পাউডারের প্রধান গবেষক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বিভিন্ন পরিবারের কিশোরী মেয়েদের পুষ্টির কথা চিন্তা করে আমরা এ মাছের পাউডার তৈরি করেছি। কারণ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বিশেষ করে মাছের মাথাসহ ভালো খাবারগুলো খেয়ে থাকে, আর এতে খাদ্য ও পুষ্টি থেকে বাদ পড়ে কিশোরী ও নারী সদস্যরা। মাছের এই পাউডারের পুষ্টিগুণ কাঁচা ও শুকনো মাছের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। আর এ পাউডারের মাধ্যমে একটি পরিবারের সকল সদস্য সমানভাবে পুষ্টি পাবে।তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ফিশ পাউডারের স্থায়িত্বশীল ব্যবহার ও সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তারা এতে অংশগ্রহণ করবেন।
গবেষণা দলের সদস্য ড. শহীদ সরোয়ার ও শুভ ভৌমিক বলেন, ফিশ পাউডার নিরাপদ পুষ্টি গুন অন্য মাছের থেকে অনেক উন্নত। এ পাউডার কিশোরী ও সুবিধা বঞ্চিতদের সংকট সময়ে উপকারে আসবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল পরিচালক (পুষ্টি) ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ফিশ পাউডার ব্যবহারের যে জনপ্রিয়তা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা আমাদের গবেষণাকে আশাবাদী করে তুলছে। আগামী প্রজন্মের পুষ্টি চাহিদা রোধ ও উন্নত জাতি গঠনে মাছের তৈরি পুষ্টি পাউডার অত্যন্ত কার্যকর ভুমিকা রাখবে।
এ উপলক্ষে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডারে দিনব্যাপি মাঠ দিবস ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে সুবিধাভোগী ৪০টি পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
নোবিপ্রবির বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হানিফের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. দিদার উল আলম, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ফারুক উদ্দিন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল পরিচালক (পুষ্টি) ড. মো. মনিরুল ইসলাম।
সুবিধাভোগী কিশোরী সোনিয়া আক্তার বলেন, আমাদের পরিবারে মাছের মাথা ও লেজ কে খাবে এটা নিয়ে আগে সবার সাথে মনকষাকষি হতো। কিন্তু মাছের পাউডার আসার পর খাবারে ব্যবহার করায় এখন সবাই সমানভাবে সমান স্বাদ নিতে পারছে।
গৃহিনী রিনা বেগম জানান, মাছের পাউডার আমাদের নিত্য দিনের রান্নায় নতুন নতুন আইটেম যোগ করে দিয়েছে। আমাদের পাউডার ব্যবহার দেখে আশ পাশের অনেকে এটা ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
নিজের বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য গবেষক দলের সাফল্যের প্রশংসা করে এ গবেষণাকে আরও বেগবান ও জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ জাতীয় আরো খবর..