জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেছেন, দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজ যখন বাজারে আসতে শুরু করেছে, পেঁয়াজের দাম যখন কমতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বাংলাদেশে সম্ভাবনা জাগানো পেঁয়াজ চাষ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশের পেঁয়াজ চাষিদের রক্ষার পাশাপাশি দেশকে পেঁয়াজে স্বনির্ভর করতে এখনই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, কৃষিপণ্যে ভারত নির্ভরতা আমাদের জন্য বড় ধরনের সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশটি কখনো চাল, কখনো পেঁয়াজ, কখনো বা অন্য কোন পণ্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বার বার সঙ্কটে ফেলে আমাদেরকে। তিনি বলেন, প্রায় একযুগ আগে ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ভারতের বাংলাদেশে চাল রফতানি বন্ধের প্রতিক্রিয়ায় বেশ বড় সংকটে পড়তে হয়েছিল দেশের মানুষকে।
ইতিমধ্যে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রায় স্বাবলম্বী হয়ে উঠলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে ধান কাটার ভরা মওসুমে ভারত থেকে চাল আমদানি করে আমাদের কৃষকদের বার বার লোকসানের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, হিন্দুত্ববাদি বিজেপি সরকার তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দিলেও বাংলাদেশে গরুর গোশতের আকাল পড়েনি।
<>দেশের খামারিরা সারা বছরের প্রয়োজনীয় গরুর গোশতের যোগানসহ কোরবানীর ঈদে পশুর চাহিদা পুরণে যথেষ্ট সফল হয়েছেন। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও গরুর গোশত রফতানি করা কঠিন কিছু নয়।
একইভাবে চাল, পেঁয়াজ, আলুর চাহিদা পুরণ করে বিদেশে রফতানির উদ্যোগ নেয়া কোনো অসম্ভব কাজ নয়। মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, গত ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কয়েকদিন আগে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
এবারও হঠাৎ করে ভারত কর্তৃক পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে পেঁয়াজের দামে বেড়ে যায়। সঙ্কট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ থেকে জরুরী ভিত্তিতে আমদানি করে পেঁয়াজের চাহিদা ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সেই সাথে দেশের কৃষকরাও বেশি পরিমান পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ শুরু করে, যার সুফল আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন ভারতীয় পেঁয়াজের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তখনই তারা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা ও বাড়তি শুল্ক আরোপ এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাংলাদেশি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ফেলে দেয়। অথচ নিত্য ব্যবহার্য প্রায় প্রতিটি কৃষিপণ্যেই স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশের কৃষক ও খামারিদের সামর্থ্য রয়েছে।
এ জন্য তাদের উৎপাদিত পণ্যের সর্ঠিক মূল্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এবার ভরা মওসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
কৃষি পণ্যের উৎপাদন, বিতরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে পরিচালনা করা গেলে ধান, আলু, পেঁয়াজের মত নিত্য পণ্যের চাহিদা উৎপাদনের যে হিসাব পাওয়া যায়, তাতে দেশে কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। তিনি পেঁয়াজসহ ভারতীয় কৃষিপণ্যের আমদানি বন্ধে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।