1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

সু‌যোগ হারা‌চ্ছে দেশ: সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার ভিজিট ভিসায় মিলছে চাকরি

নিজস্ব প্রতি‌বেদক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৭১৯ বার পঠিত

বৈশ্বিক মহামারিতে ক‌রোনা শ্রমবাজারের খাতসহ সব সেক্টরই ক্ষতবিক্ষত। মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের উল্লেখযোগ্য শ্রমবাজার দীর্ঘ আট বছর ধরে বন্ধ। করোনার শুরু থেকে দেশটির সব লেবার ভিসা ইস্যু বন্ধ রয়েছে। ক‚টনৈতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানোর পরেও বাংলাদেশের জন্য মুসলিম দেশটির শ্রমবাজারের দুয়ার উন্মুক্ত সম্ভব হয়নি। করোনা মহামারি শিথিল হওয়ায় আমিরাত সরকার বিগত আড়াই মাস যাবত ভিজিট ভিসায় আগন্তক অভিবাসীদের ওয়ার্ক ভিসায় স্থানান্তরের সুযোগ দিয়েছে। সেন্ডিং কান্ট্রিগুলো থেকে অভিবাসী কর্মীরা ভিজিট ভিসায় আমিরাতে গিয়ে ওয়ার্ক ভিসা বের করে দেদারসে চাকরি লাভ করছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তহীনতার দরুন বাংলাদেশ এ সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছে প্রতিটি খাত। কোভিডের কারণে অভিবাসন খাতে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলা করতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ রিক্রুটিং এজেন্সীগুলোকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে। জনশক্তি রফতানি খাতের উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না থাকায় প্রতিদিন শত শত কর্মী ভিটেমাটি গবাদিপশু বিক্রি করে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে ভিজিট ভিসায় আমিরাতে চলে যাচ্ছে। দেশটিতে গিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর থেকে ভিজিট ভিসাকে ওয়ার্ক ভিসায় স্থানান্তর করে কাজে যোগদান করছে। এদের মধ্যে অনেকেই বেতন পাওয়াও শুরু করেছে।

বিএমইটি’র সূত্র জানায়, ১৯৭৬ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৯৮ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে দেশটিতে চাকরি লাভ করেছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৯ জন। ২০১২ সালে দেশটিতে গিয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৫২ জন কর্মী। ওই সাল থেকেই দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। তবে পরবর্তীতে হাতে গোনা কিছু কর্মী গেছে দেশটিতে। ২০১৯ সালে সউদী আরবে চাকরি লাভ করেছে ৩ লাখ ৯৯ হাজার নারী-পুরুষ কর্মী। এর মধ্যে মহিলা গৃহকর্মীর রয়েছে ৬২ হাজার ৫৭৮ জন। একই বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছে মাত্র ৩ হাজার ৩১৮ জন কর্মী। আর ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সউদী আরবে মহিলা গৃহকর্মী গিয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৫০ জন। একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মহিলা গৃহকর্মী গিয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৬২ জন। করোনার কারণে জনশক্তি রফতানি নেই বললেই চলে। গত ১ ডিসেম্বর থেকে গত ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে ১৬ হাজার ৯৭৬ জন কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছে। ২০১৯ সালে সউদী আরব থেকে প্রবাসী কর্মীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ৩৬৪৬ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরা থেকে প্রবাসী কর্মীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ২৭৩২ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় সারা বিশ্বের স্বাভাবিক অর্থনীতি যখন টালমাটাল অবস্থায়, তখনও বাংলাদেশে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে প্রবাসীরা কয়েকগুণ বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

গত অক্টোবর মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ২১১ কোটি (২ দশমিক ১১ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আর গত চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) প্রবাসীরা প্রায় ৯ বিলিয়ন (৮.৮২৫ মিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৮৮২ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীরা ৬১৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন। অর্থাৎ এ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় প্রবাসীরা ২৬৪ কোটি ডলার বেশি পাঠিয়েছেন।
একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, একশ্রেণির ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে ভিজিট ভিসায় দুবাই-আবুধাবি যেতে একজন কর্মীকে ইমিগ্রেশন পার হতে বাধ্য হয়েই ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার বকশিস দিতে হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা থাকলে বিমানবন্দরে কর্মীদের এসব ঘুষের টাকা দিতে হতো না।

আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশটিতে সাড়ে ৭ লাখ নারী-পুরুষ কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। এদিকে, আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ভিডিও আলোচনায় ভিজিট ভিসায় গিয়ে ওয়ার্ক ভিসায় ট্রান্সফারের সুযোগের বিষয়টি প্রবাসী মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ লিখিত আকারেও মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে আমিরাত সরকারের এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর আব্দুল আলিম মিয়া তার পিতার মৃত্যুর দরুন দেশে অবস্থান করে ইনকিলাবকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রশ্নের জবাবে লেবার কাউন্সেলর আব্দুল আলিম মিয়া বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমিরাত সরকার সকল দেশের লেবার ভিসা বন্ধ রেখেছেন। তবে দেশটিতে প্রচুর অভিবাসী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে অভিবাসী কর্মীর চাহিদা মেটাতে আমিরাত সরকার ভিজিট ভিসায় যাওয়া কর্মীদের ওয়ার্ক ভিসায় স্থান্তরের সুযোগ দিয়েছে। অনেক দেশের কর্মীরা ভিজিট ভিসায় গিয়ে ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, ভিজিট ভিসায় দেশটিতে গিলে লাভ লস দু’টোই আছে। এ সুযোগটি কাজে লাগাতে হলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। লেবার কাউন্সেলর বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর যাবত আমিরাতের শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় অনেকেই এয়ারপোর্ট ম্যানেজ করে ভিজিট ভিসায় গিয়ে চাকরি করছে। তিনি বলেন, দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে সাড়ে ৭ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বিদেশি কর্মীদের ভিজিট ভিসায় গিয়ে ওয়ার্ক ভিসায় ট্রান্সফার হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। বাংলাদেশ এ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, অনেকেই বে-হিসাবে এয়ারপোর্ট দিয়ে ভিজিট ভিসায় দুবাই চলে যাচ্ছে। ভিজিট ভিসায় দুবাই গিয়ে কাজ করার বিরূপ প্রতিক্রিয়াও পরে দেখা দিতে পারে। মন্ত্রী বলেন, আমরাও চাই একজন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে গিয়ে কাজ করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাক। কিন্তু এয়ারপোর্টে যদি কড়াকড়ি করি তাহলে অন্যরা বেশি লাভমান হবে। করোনা মোকাবিলায় প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, অভিবাসী কর্মীদের জন্য আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা চাই সরকার তাদের জন্য সুযোগ সুবিধা দিয়েছে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোগ করতে পারেন।
কল্যাণ ডেস্ক সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশে কাজ না থাকায় এবং নানা কারণে গত ১ এপ্রিল থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিদেশ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৩ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেই দেশে ফিরেছে ৪৬ হাজার ৪৩ জন প্রবাসী কর্মী।

বায়রার একজন নেতা ইনকিলাবকে বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ছুটিতে বাইরের দেশে আটকে পড়া আবুধাবি ও এলাইন শহরের অভিবাসী কর্মীদের ইকামা গত দু’ মাস ধরে রেড সিগন্যাল করে রেখেছে। এতে রেড সিগন্যালধারী বিপুল সংখ্যক প্রবাসী কর্মী ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। এদের অনেকেরই ভিসা ও ইকামার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ কিছুটা শিথিল হওয়ায় এ যাবত দেশটিতে চড়া দামে টিকিট কিনে অনেকেই চলে গেছে। যারা চড়া দামে টিকিট কিনতে পারেনি তারা দেশটিতে যেতে পারেনি।

করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশি কর্মীরা যেন চাকরিচ্যুত হয়ে দেশে ফেরত না আসে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত জুন মাসের প্রথম দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সাথে ফোনালাপকালে তিনি এ অনুরোধ করেন। আমিরাতের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, কেউ চাকরিচ্যুত হলেও যেন কমপক্ষে ৬ মাসের সমপরিমাণ ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পায়। তিনি সেদেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য ইউএইর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। জবাবে এ সব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্ত্রী নাহিয়ান আশ্বস্ত করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com