কুমিল্লায় একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন কুমিল্লার দুই সংসদ সদস্য। রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমা সংবাদ সম্মেলন ডেকে সদর আসনের এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেন। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর ১০ আগে সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সদরের এমপি বাহার। এতে তিনি সাংসদ সীমার বাবা এবং আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আফজল খানের পরিবারকে জড়িয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করেন।
নারী এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমা নগরীর নজরুল এভিনিউয়ের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ৬ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি বলেন, এমপি বাহার তার পরিবারের ওপর মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া প্রাচীন ঐতিহ্য টাউন হল গণশুনানির নামে ভাঙার পরিকল্পনার সমালোচনাও করেন তিনি।
তিনি বলেন, কুমিল্লার গোমতী নদীর বালু জোরপূবর্ক উত্তোলন থেকে শুরু করে এলজিইডি, গণপূর্ত, সড়ক বিভাগ, শিক্ষাবোর্ড, কুমিল্লা প্রেসক্লাব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশলী, সিটি কর্পোরশেন, রেজিস্ট্রি অফিস ও জেলা কারাগারসহ জেলার সব সরকারি দপ্তর তার নির্দেশিত লোকজনের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কুমিল্লা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রকাশ্যে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে সরকারি মহাফেজ খানায় ঢুকে দলিল ঘষামাজার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় পুরো শহরবাসী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে ওই এমপির কোনো বক্তব্য নেই। উল্টো এ ঘটনায় মামলার বাদীসহ তিন কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।
কুমিল্লা টাউন হল প্রসঙ্গে এমপি সীমা বলেন, ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা টাউন হল হেরিটেজ ঘোষণা হবে এজন্য গণশুনানির কি দরকার? হেরিটেজ নিয়ে গণশুনানি হবে এমনটি কখনও শুনিনি। মূলত টাউন হল ভেঙে পুরো প্রজেক্টটির অর্থায়নে নিজের লিজকৃত মার্কেটটি রক্ষা করতে এ অপচেষ্টা। এছাড়াও তিনি টাউন হলের সম্পত্তি লিজ নিয়ে বিক্রি করে বসে আছেন। টাউন হল ভেঙে নতুন ভবন তৈরি না করলে মার্কেটও হারাবেন এবং ইজ্জতও হারাবেন। যার কারণে তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন টাউন হল ভেঙে ফেলার জন্য।তিনি দাবি করেন, রাতের আঁধারে এই ঐতিহ্যবাহী টাউনহলটি ভেঙে ফেলারও অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে কুমিল্লার আলোচিত জিল্লুর রহমান জিলানী হত্যাকাণ্ডের আসামিদের প্রটেকশন দেওয়ার অভিযোগ এনে এমপি সীমা বলেন, সংসদ সদস্য হাজী বাহার এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বাঁচাতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। এতে জিল্লুর পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। কারণ, মামলার অন্যতম আসামি মহানগর যুবলীগের সভাপতি আবদুল্লা আল মাহমুদ সহিদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি এবং জেলার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জহিরুল ইসলাম রিন্টু প্রকাশ্যে এমপির সাথে ঘুরে বেড়ায়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, এমপি বাহারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কথা বলায় দেশবরেণ্য সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানকে রাজাকারপুত্র আখ্যা দেন এমপি বাহার। অথচ কুমিল্লার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুর বাবা স্বীকৃত রাজাকার হলেও তিনি তার সাথে মিলেমিশে চলেন। এছাড়াও মেয়র সাক্কুর সাথে বিভিন্ন কাজের ৬০% থেকে ৪০% ভাগাভাগির কমিশন পাওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর নগরীর বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন টাউন হলে সংবাদ সম্মেলন করেন এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কুমিল্লার মানুষের সিদ্ধান্তেই টাউন হলের উন্নয়ন কাজ হবে। এসময় বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আফজল খানের বিরুদ্ধে একটি স্কুল থেকে ৩০/৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করেনি। আমার বিরুদ্ধে কেউ দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের সামনে একটা কথা বলতে চাই, আমি রাজনীতিবিদ হিসেবে ওয়াদা করেছিলাম সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করবো। আমি আমার ওয়াদার বরখেলাপ করি নাই।…এখানে সাংবাদিকরা আছেন কেউ কোথায় প্রমাণ করতে পারেন যে, আমি রাজনৈতিকভাবে দুর্নীতি করেছি, ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতি করেছি, ব্যক্তিগতজীবনের কার সম্পদের ওপর লোভ লালসা করেছি, আপনারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে প্রমাণ করুন। সরাসরি আপনারা আমাকে টাউন হলে আনবেন জনসমাবেশে দাখিল করবেন, আমি পদত্যাগ করে বাড়ি চলে যাবো। আমার কোনো সমস্যা নাই।
আফজল খান ও তার পরিবার নিয়ে এমপি বাহার বলেন, আফজল খান ও তার স্ত্রী ২২ বছরে কুমিল্লা মর্ডান স্কুলের ৩০/৪০ কোটি টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। তার প্রমাণ করতে না পারলে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করবো। তাদের পরিবার কুমিল্লায় বিভিন্ন অপকর্ম করেছে। তাদের হাত থেকে মডার্ন স্কুল উদ্ধার হয়েছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন স্কুলের ফান্ড ছিল ৫৪ লাখ টাকা। আর এখন আছে সাত কোটির বেশি।
যুবলীগকর্মী জিল্লুর রহমান চৌধুরী ওরফে গোলাম জিলানী হত্যার প্রসঙ্গে এমপি বাহার বলেন, চৌয়ারায় নিহত জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে একটি ডাকাতি মামলায় সে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত। সে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল হত্যা মামলার আসামি। আমি যতদূর জানি সে খুন হয়েছে চৌয়ারা বাজারের ভাগাভাগি নিয়ে। তবে আমরাও তার হত্যার বিচার চাই। অথচ তাকে যুবলীগ কর্মী সাজিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে একটি মহল। তারা সাজানোভাবে জিল্লুর হত্যা মামলায় অনেক রাজনৈতিক নেতাদের জড়িয়েছে। আমি পরিস্কার করে বলে দিতে চাই, আগে এই হত্যা মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে, এরপর গ্রেফতার। তদন্তে আমার দলের কোনো কর্মী জড়িত থাকার প্রমাণ থাকলে তারও বিচার হবে। হত্যাকাণ্ড দিয়ে আফজল খানের মেয়ে এমপি সীমা ও তার ছেলে ইমরান টিভিতে আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে। তবে লাশের রাজনীতি কুমিল্লায় চলবে না। লাশ নিয়ে কুমিল্লায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটার কোনো সুযোগ নেই।সুত্র:সময় সংবাদ
এ জাতীয় আরো খবর..