গত ২০ বছরে কুমিল্লায় ২ হাজার ৬৪০ টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে । ১৭ উপজেলায় হত্যা-দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে এসব অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২০০১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ২০ বছরে জেলায় অজ্ঞাত লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।
জেলা পুলিশের উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা বাড়লেও নগরীর টিক্কারচর এলাকায় কবরস্থানটির এখন বেহাল দশা। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম কুমিল্লা শাখার মাধ্যমে সেখানে নতুন কবর খনন করতে গিয়ে দেখা দিচ্ছে বিড়ম্বনা। কোদাল চালাতেই মাঠির নিচ থেকে উঠে আসে পুরোনো লাশ কিংবা হাড়-কঙ্কাল।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে থানা পুলিশকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও সিআইডির হাতে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডারের সহায়তায় এনআইডি সার্ভার থেকে লাশ শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়। সংগ্রহ করা হয় ডিএনএ নমুনাও। কিন্তু অধিকাংশ লাশ বিকৃত থাকায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
পরে লাশের ছবি তুলে ও ময়নাতদন্ত করে দাফনের জন্য কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড রোডের আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে পাঠানো হয়। পরে সেই লাশ দাফনের জন্য নেয়া হয় টিক্কারচর কবরস্থানে।
কিন্তু এত লাশের যেখানে ময়নাতদন্ত করা হয়, সেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে নেই ডিএনএ পরীক্ষাগার। লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে নির্ভর করতে হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ কিংবা পুলিশের ডিএনএ ল্যাবের।
এছাড়া লাশ শনাক্ত করতে পুলিশের হাতে প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় অধিকাংশ লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যায়। তাই এসব মৃত্যুর কারণও থেকে যায় রহস্যাবৃত।
আঞ্জুমানের কার্যালয় থেকে জানা যায়, উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী। অজ্ঞাত এসব লাশের মধ্যে ২০০১ সালে ১৩৮টি, ২০০২ সালে ১৩৫, ২০০৩ সালে ১৪৩, ২০০৪ সালে ১২৭, ২০০৫ সালে ১৩৩, ২০০৬ সালে ১৫৩, ২০০৭ সালে ১২৭, ২০০৮ সালে ১২০, ২০০৯ সালে ১১৪, ২০১০ সালে ১৪৯, ২০১০ সালে ১৩৪, ২০১১ সালে ১১৭, ২০১২ সালে ১১৯, ২০১৩ সালে ৯৫, ২০১৪ সালে ১০৮, ২০১৫ সালে ১১৩, ২০১৬ সালে ১৩০, ২০১৭ সালে ২০৫, ২০১৮ সালে ১০৩, ২০১৯ সালে ১০৮ এবং চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমীন সুলতানা বলেন, তাদের মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগে এখনও ডিএনএ ল্যাব চালু হয়নি। অজ্ঞাত লাশের পরিচয় শনাক্তসহ অন্যান্য মামলার প্রয়োজনে ডিএনএ প্রযুক্তির দরকার হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চাহিদা অনুসারে আলামত ঢামেক কিংবা পুলিশের মালিবাগের ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। কুমেকে ডিএনএ ল্যাব চালু হলে লাশের পরিচয় শনাক্তসহ যেকোনো মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হবে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী বলেন, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচয় শনাক্ত করতে আমরা পিবিআই ও সিআইডির সহায়তা নিয়ে থাকি। প্রয়োজনে ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, লাশ বিকৃত ও নষ্ট হয়ে গেলে অনেক সময় প্রযুক্তির মাধ্যমেও কাজ হয় না। এখন পর্যন্ত ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তিতে এনআইডির মাধ্যমে লাশের পরিচয় শনাক্ত করার প্রযুক্তি পুলিশের হাতে আসেনি।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কুমিল্লা শাখার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন লাশ কবর দেয়ার বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করে বলেন, সিটি করপোরেশন বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য যে জায়গা দিয়েছে তা খুবই সামান্য। তাই পুরুষ ও নারীর কবর দেয়ার জন্য ইসলামী শরিয়া মোতাবেক যেটুকু কবর খনন করার কথা তা সেখানে সম্ভব হয় না। কবর খনন করতে কোদাল চালাতেই মাটির নিচ থেকে পুরাতন লাশ ও হাড়-কঙ্কাল উঠে আসে।
আঞ্জুমান কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল হাসেম বলেন, নগরীর একাধিক পরিত্যক্ত স্থানের লিজ পেতে পাউবোর সহায়তায় জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিকল্প একটি কবরস্থান না করা গেলে টিক্কারচর কবরস্থানে আর হয়ত লাশ দাফন সম্ভব হবে না।সুত্র:আ:কু