নোয়াখালীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. দুলাল হোসেন (৪০) আহত অবস্থার ৪১ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই ভিডিওটি করা হয়েছে বলে তার বড় ছেলে আবদুল আজিজসহ একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
ভিডিওর শুরুতে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘একগা সুমইন্যা (একজন সুমন)’। এ সময় পাশে থাকা একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘সুমন ইগা কে? কার লগে চলাফেরা করে?’ জবাবে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের লোক’। পাশে থাকা ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘বর্তমানে জসিম চেয়ারম্যানের লগে রানিং চলাফেরা করে?’
দুলাল বলে, ‘জসিম চেয়ারম্যানের লোক। আরেকগা (আরেকজন) অইছে ইছুবিয়ার ভাই ফারুক মাঝির…’। পাশে থাকা ব্যক্তি জানতে চান, ‘ফিরোইজ্যা?’ তিনি বলেন, ‘ফিরোইজ্যা ইগার নাম। আরেকগা অইলো নুর হুসুইন্নার হোলা (ছেলে) সবুইজ্জা’।
পাশে থাকা ব্যক্তি ফের প্রশ্ন করেন, ‘আন্নে এই তিনুগারে (তিন জনকে) দেখছেন?’। দুলাল মেম্বার বলেন, ‘আর গুনরে চিনি না।’ আবার প্রশ্ন করেন, ‘এই তিনগারে চিনছেন নি কি?’ তখন মুমূর্ষু অবস্থায় ‘হ্যাঁ সূচক’ জবাব দেন। তখন ওই ব্যক্তি আবার নামগুলো বলতে থাকেন। তখন দুলাল বলেন, ‘অকগা সবুজ, আরেকগা ফিরোজ, আরেকগা সুমন’।
ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে নিহতের ছেলে আবদুল আজিজ বলেন, ‘কে করেছে তা জানি না। তবে ভিডিওটি বাবা জীবিত থাকায় অবস্থায় করা হয়েছে এবং কণ্ঠ আমার বাবার।’
আন্ডারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন দাবি করেন, ‘আন্ডারচর ইউনিয়নের ৪০ হাজার লোক-ই আমার। ভিডিওতে যে সুমনের কথা বলা হয়েছে সে আমার লোক না। সে আমার এলাকার লোক। আমার সঙ্গে যারা গত নির্বাচনে ভোট করেছে তারাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব করাচ্ছে। যেহেতু বক্তব্যে সুমনের নাম এসেছে তাই প্রশাসনসহ আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়ে সুধারাম মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ইতোমধ্যে দুলাল মেম্বার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় সবুজ নামের একজনকে গ্রেফতার করেছি এবং সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই হত্যার সঙ্গে সরাসরি এবং পর্দার আড়ালে যারা রয়েছে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাত ৯টার দিকে এলাকায় সালিশি বৈঠক শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন দুলাল। তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার (২৯ মে) রাত পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বুধবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
নিহত দুলাল নোয়াখালীর আন্ডারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও আন্ডারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ছিলেন। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।