চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত পাঁচ মাসে এ নগরীতে ১৮২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন তিন জন। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দু-তিন জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এদিকে, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও জোরদার করা হচ্ছে না মশকনিধন কার্যক্রম। নগরবাসীর অভিযোগ, মশকনিধনে পর্যাপ্ত কীটনাশক ছিটাচ্ছে না সিটি করপোরেশন। এ কারণে নগরীতে ডেঙ্গুর সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮২ জন। একই সময়ে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১৭ জন। চলতি বছর জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন এবং মে মাসে ৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় মারা গেছেন তিন জন। আক্রান্তদের ১১৯ জন নগরীর এবং ৬৩ জন বিভিন্ন উপজেলার। তাদের মধ্যে পুরুষ ৯৩ জন, নারী ৩৫ এবং শিশু ৫৪ জন।
এদিকে, উপজেলা পর্যায়ে সীতাকুণ্ডে ৩০ জন; সাতকানিয়ায় ৫ জন; বাঁশখালী ও আনোয়ারায় চার জন; চন্দনাইশ ও বোয়ালখালীতে একজন; রাঙ্গুনিয়া, লোহাগাড়া, মীরসরাই, পটিয়া, সন্দ্বীপ, রাউজান ও হাটহাজারীতে দুজন করে এবং কর্ণফুলীতে তিন জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
গত বছর প্রথম পাঁচ মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৭ জন। চলতি বছর একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮২ জন। যা গত বছরের তুলনায় দশ গুণের বেশি।
নগরীর মুরাদপুর সঙ্গীত এলাকার বাসিন্দা মুনতাসির উদ্দিন বলেন, ‘এলাকায় মশার ওষুধ ছিটাতে আসছেন না সিটি করপোরেশনের লোকজন। গত এক বছরেও তাদের ওষুধ ছিটাতে দেখিনি। হয়তো কাজে তদারকি না থাকায় এমনটি হচ্ছে। সন্ধ্যা নামার আগেই মশার উৎপাত শুরু হয়। কয়েল জ্বালিয়েও মশা তাড়ানো যাচ্ছে না। যে কারণে ডেঙ্গু নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি।
এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহী বলেন, ‘বর্তমানে মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত আছে। নগরীর অলি-গলি ও আবাসিক এলাকায় ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বর্তমানে মশা নিধনের ওষুধ হিসেবে ৪০ লিটার মাসকুবার এবং দুই হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড মজুত আছে। আরও ১৮ হাজার লিটার ওষুধ কেনার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার লিটার মশা ধ্বংসকারী অ্যাডাল্টিসাইড এবং লার্ভা ধ্বংসকারী তিন হাজার লিটার লার্ভিসাইড থাকবে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘ইতোমধ্যে এখানে বেশ কিছু ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরা প্রস্তুত আছি। রোগী বাড়লে মেডিসিন ওয়ার্ডে তিনটি পৃথক ডেঙ্গু কর্নার করা হবে। শিশুদের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হবে। বলা যায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি। কারণ, ডেঙ্গুর একমাত্র উৎপত্তিস্থল মশা। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে মশা নিধন করতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জ্বর হলে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ডেঙ্গুর লক্ষণ আছে কিনা।