সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপিকে ইসির চিঠি
সংলাপ বর্জনকারী অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে মতবিনিময় করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকের কোনও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বিএনপি আলোচনায় সম্মত কিনা জানতে চাওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এক ডিও লেটার (আধা-সরকারিপত্র) দিয়ে বিএনপি মহাসচিব ও দলের দলের নেতাদের মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিএনপি চাইলে ওই মতবিনিময়ে সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ অংশ নিতে পারে বলেও এতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বিএনপিকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
অবশ্য ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, যতদূর জানি চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চিঠি প্রস্তুতও করা হয়েছে। তবে আমার জানা মতে এখনও চিঠি দেওয়া হয়নি।
চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার লিখেছেন, ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন করে আসছি। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংসদ নির্বাচনের কথা অনুধাবন করে আসছে।
চিঠিতে বর্তমান ইসি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বর্তমান কমিশনের প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। আপনারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও আপনাদের এমন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কৌশলের বিষয়ে কমিশনের কোনও মন্তব্য নেই।
চিঠিতে সিইসি বলেন, আপনাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেও কমিশন মনে করে বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক না হোক, অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা বা মতবিনিময় হতে পারে। আপনাদের নির্বাচন কমিশনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সদয় সম্মত হলে দিনক্ষণ আলোচনা করে নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রত্যুত্তর প্রত্যাশা করছি।
ইসির চিঠির বিষয়ে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল জানান, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির কোনও আগ্রহ নেই। এরকম কোনও চিঠি পাওয়ার বিষয়ে তারা কোনও মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
বিএনপিকে সংলাপের অংশগ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হলেও গত ডিসেম্বরে এক অনুষ্ঠানে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছিলেন—তারা নতুন করে রাজনৈতিক দলকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন না। গত ২২ ডিসেম্বর পটুয়াখালীতে এক অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, বিএনপিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু বিএনপি আমাদের সে অনুরোধ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে অনড়। এক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বিএনপি বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের আর কোনও সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গত ১৭ থেকে ৩১ জুলাই দেশের রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করে। ইসির শিডিউল অনুযায়ী ২০ জুলাই বিএনপির সাথে সংলাপ থাকলেও দলটি তা বর্জন করে। বিএনপি ছাড়াও আরও ৮টি দল সংলাপ বর্জন করে।
এছাড়া সংলাপের আগে ইসি ইভিএম প্রদর্শন বিষয়ক মতবিনিময় করলেও বিএনপিসহ কয়েকটি সমমনা দল সেটাও বর্জন করে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের শুরু থেকেই বিএনপি তাদের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আসছে। বর্তমান ইসির অধীনে দলটি স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করে আসছে। এমনকি নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপও বর্জন করে দলটি।
সংগৃহিত