রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে তাসলিমা বেগম রেণুকে (৪২) হত্যা মামলার চার্জশিট-ভুক্ত পাঁচ আসামিকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই আসামিরা হলো— মোহাম্মদ রাজু, রিয়া বেগম ময়না, বাচ্চু মিয়া, মোহাম্মদ শাহীন ও মুরাদ মিয়া।মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংশ্লিষ্ট কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সরোয়ার পায়েল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুর্বে আসামিরা বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চসহ বিভিন্ন বেঞ্চ থেকে জামিন পায়।২০১৯ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে তাসলিমা বেগম রেণুকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ১৫ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আবদুল হক।
চার্জশিটভুক্ত ১৫ আসামি হলো— মো. ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় হোসেন মোল্লা (২০), রিয়া বেগম ওরফে ময়না বেগম (২৯), মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ওরফে আজাদ মণ্ডল (৫০), মোহাম্মদ কামাল হোসেন (৪০), মোহাম্মদ শাহিন (৩২), মো. বাচ্চু মিয়া (৩৬), মো. বাপ্পী ওরফে শহিদুল ইসলাম (২১), মো. মুরাদ মিয়া (২৬), মো. সোহেল রানা (৩০), আসাদুল ইসলাম (২২), মো. বিল্লাল মোল্লা (৩২), মো. রাজু ওরফে রুম্মান হোসেন (২৩), মো. মহিউদ্দিন (১৮), মো. জাফর হোসেন পাটোয়ারী (১৭), ওয়াসিম ওরফে মো. অসীম আহম্মদ (১৪)। এর মধ্যে আসামি মো. মহিউদ্দিন পলাতক রয়েছেন। বাকি ১৪ আসামি কারাগারে আছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আলিফ, মারুফ, সুমন ও আকলিমা নামে চার জনের পূর্ণাঙ্গ নাম ও ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে গত বছরের মাঝামাঝিতে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকটি হামলায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাসলিমা রেণুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রেণুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত পরিচয় পাঁচশ’ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার পর প্রথমে বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক প্রায় ৫ মাস তদন্ত করেন। এরপর মামলা তদন্তের ভার যায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে।
রেণু লেখাপড়া শেষে আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছেন। পরে স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৭ সালে স্বামী তসলিম হোসাইনের সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এরপর মায়ের সঙ্গে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটের একটি ভাড়া বাসায় দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন। সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে খবর নিতে উত্তর বাড্ডার স্কুলটিতে গিয়ে ছিল রেণু স্কুল সামনেই ছেলে ধরা সন্দেহে কিছু অতিউৎসাহিত মানুষের নির্যাকনে মারা যায় রেণু।