কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ১২টি সুপারিশসহ ৮০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে স্বরাষ্ট মন্ত্রানালয়ে।
তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কক্সবাজারে হিলডাউন সার্কিট হাউজে আজ শনিবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ব্রিফিংয়ে তিনি উল্লেখ করেন। আমরা ঘটনার উৎস সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরায় না ঘটে সে ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়েছে।
মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আমাদের হৃদয়কে যেমন ব্যথিত করেছে, সে রকম আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলেছে। আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, পেশাদারত্ব, চেইন অব কমান্ড মেনে আমাদের চলা উচিত। আইনের রক্ষক হয়ে আমরা যেন ভক্ষকে পরিণত না হই। আমাদের হাতে অস্ত্র দিয়ে যে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা হয়েছে আমরা তা যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারি। এই অস্ত্র যেন আমাদের মানব থেকে দানবে পরিণত না করে। ভবিষ্যতে মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মতো অন্য যেকোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন এ রকম মৃত্যুবরণ না করে আমি সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে আমার অনুভূতি ব্যক্ত করলাম।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে ৮০ পৃষ্ঠার কম্পোজ করা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন এবং কমিটির চার সদস্য তাতে সই করেছেন। এতে বিভিন্ন ছবি, চিঠি, কাগজাদি সংযুক্ত আছে ৬০০ পৃষ্ঠা। দুই খণ্ডে আগামী সোমবার এই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জমা দেবেন কমিটির সদস্যরা।
এর মধ্য দিয়ে চার দফা সময় নিয়ে ৩৫ দিনের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন হওয়ার কথা জানালেন কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন. তদন্ত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে গেছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে সম্মিলিত এই প্রতিবেদনটি প্রায় ৮০ পৃষ্ঠা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে জন্য করণীয় সম্পর্কে একটি সুপারিশমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। দুটিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেওয়া হবে।’
কমিটির প্রধান জানান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৬৮ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। এসব কথা-বক্তব্য এবং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে কমিটির সব সদস্য সর্বসম্মতভাবে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করেছেন। সিনহার মৃত্যু কেন ঘটেছে এবং এ ঘটনায় কারা দায়ী, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
গত ৩১ আগস্ট টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে সদস্য করা হয়েছিল কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি। কিন্তু এর পরের দিনই ৩ আগস্ট তদন্ত কমিটি চার সদস্য বিশিষ্ট করে পুনর্গঠন করা হয়। এতে কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। আর সদস্য করা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. জাকির হোসেন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদকে।
গত ৩ আগস্ট তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করে। এ সময় কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সরকার সাত কর্মদিবস সময় নির্ধারণ করে দিলেও এ নিয়ে তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়। এর মধ্যে বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে আরো সাত দিনের সময় চায় এবং তা বাড়ানো হয় ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। চলতি মাসের ৩ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত দল।