জলে ভাসা বড় সড়ক ধরে শুধু মানুষের স্রোত। বানের জলে বসতভিটা আর সহায়-সম্বল হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে বানভাসি মানুষেরা। কারও মাথায় বেঁচে যাওয়া জিনিসপত্রের পুটলি কিংবা জরুরি কাপড়চোপড়। মায়েদের কোলে ছোট সন্তান, আবার কারও হাতে হাঁস-মুরগি।
কেউ কেউ আবার গৃহপালিত পশু নিয়েও ছুটছেন। তবে কোথায় যাবেন তারা, নিশ্চিত করে কেউ জানে না। ত্রাণের জন্য নয়, তাদের মুখে শুধু বাঁচার আকুতি, আশ্রয়ের অনুরোধ। আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে চলা মানুষের এই স্রোতই বলে দেয়, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।
জেলা প্রশাসন বলছে, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে লাখ লাখ মানুষ।
এদিকে ভয়াবহ বন্যায় জেলা সদরের সাথে বিভিন্ন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় চরম বিপর্যস্ত দুর্গত এলাকার মানুষেরা।
যদিও পানিবন্দি মানুষের উদ্ধারে সহায়তা করতে জেলা প্রশাসনের আহ্বানে সারা দিয়ে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, সকাল থেকেই কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। এসেছে নৌবাহিনীও। আজকের মধ্যে অনেককেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি উঠে পড়ায় সিলেটের বন্যাদুর্গত সকল উপজেলাই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময় পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে এমনটাই জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
পানি বাড়ার সাথে সাথে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশন। এই পাওয়ার স্টেশন আক্রান্ত হলে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বিদ্যুৎ বিভাগ। এমনকি নিশ্চিত অন্ধকারে ডুববে পুরো সিলেট। যদিও সকালে গ্রিডের পাশে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।