কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার দিন-রাত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রচারে সদ্য সাবেক মেয়র সাক্কুর সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, কমিশন বাণিজ্য, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাত এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করার অভিযোগ থাকায় সরকারবিরোধী ভোটের প্রবাহ এবার অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী কায়সারের দিকে যাচ্ছে।
বিগত দুটি নির্বাচনে যে ভোটব্যাংকের ওপর নির্ভর করে সাক্কু জয়ী হন সেই ভোটব্যাংক এখন কায়সারমুখী হয়ে পড়ছে। কর্মীশূন্য সাক্কু দিন দিন কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি পাশ কাটিয়ে জয়ের লক্ষ্যে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন নৌকার প্রার্থী রিফাত। তবে এক ডজন আওয়ামী লীগ নেতাকে তার পাশে দেখা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার নগরীর ১৩নং ওয়ার্ডের টমছমব্রিজ, দক্ষিণ চর্থা এলাকায় গণসংযোগ এবং বেশ কয়েকটি উঠান-বৈঠক করেন নৌকার প্রার্থী রিফাত। ১৩নং ওয়ার্ডের তালতলা চৌমুহনী এলাকায় গণসংযোগ করেন টেবিল ঘড়ি প্রতিকের প্রার্থী সাক্কু।
১৭নং ওয়ার্ডের তেলিকোনা চৌমুহনী পার্ক, ২৫নং ওয়ার্ডের ডুমুরিয়া, শাসনগাছা ও আলেখারচর ওষুধ মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান-বৈঠক করেন ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কায়সার।
নগরীর বিভিন্ন শ্রেণির ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে-১০ শ্রেণির ভোটারের ওপর নির্ভর করছে কুসিক নির্বাচনের ফলাফল। বিএনপি-জামায়াতের ভোটার, তরুণ ও নারী ভোটার, সংখ্যালঘু ভোটার, সচেতন নাগরিক ভোটার, সদর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডের ভোটার, বিভিন্ন ইসলামী দল এবং কওমি সমর্থিত ভোটার, বস্তি-কলোনির ভোটার, সরকারিবিরোধী ভোটার ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নির্বাচনে জয়-পরাজয় প্রভাব রাখে।
গত দুটি নির্বাচনে ১০ ধরনের ভোটের বেশিরভাগ ভোট পেয়ে সাক্কু অনায়াসে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ সাক্কু ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তার পাশে এসব ভোটার নেই।
এছাড়া বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী সব জোটের নেতাকর্মীরা কায়সারের পক্ষে কাজ করছেন। এ কারণে অনেকটাই চাঙা কায়সারের সমর্থকরা। এছাড়া কায়সারের পারিবারিক শিল্পকারখানায় কর্মরত প্রায় ২০ হাজার ভোটারও তার জন্য সহায়ক হবে।
সাক্কু নগরীকে বসবাসের অযোগ্য করেছেন : নগরীর রাজগঞ্জে পথসভায় নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেন, গত ১০ বছরে সাক্কু এ নগরীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছেন। পরিকল্পিত কোনো উন্নয়ন হয়নি। সাক্কু ব্যাপক দুর্নীতি আর কমিশন বাণিজ্য করেছেন, অপরিকল্পিতভাবে শত শত ভবনের অনুমোদন দিয়ে গিঞ্জি নগরীতে পরিণত করেছেন।
এ সময় ওয়ার্ডের উন্নয়ন সমতা বজায় রেখে রিফাত নানা প্রতিশ্রুতি দেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ভেদাভেদ ভুলে কাজ করছেন। আশা করি ১৫ জুন নৌকার বিজয় হবে।
সাধারণ ভোটাররা সঙ্গেই আছেন : নগরীর তালতলা চৌমুহনী এলাকায় গণসংযোগকালে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে থাকুক আর না থাকুক নগরীর সাধারণ ভোটাররা আমার সঙ্গেই আছেন। তিনি বলেন, গত দুই মেয়াদে আমি প্রতিশ্রুতি একেবারেই বাস্তবায়ন করতে পারিনি-সেটি ঠিক নয়।
প্রতিশ্রুতির ৭০ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছি। এবার নির্বাচিত হলে বাকিটুকু বাস্তবায়ন করব। বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। কমিশন বাণিজ্য করিনি। কাজ করলে কিছুটা ভুলত্রুটি হতে পারে-কিন্তু চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাত নয়, মিলেমিশে নগর পরিচালনা করেছি।
এক মাসের মধ্যে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ পালাবে : নগরীর তেলিকোনা এলাকায় গণসংযোগকালে ঘোড়া প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমি নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ পালাবে।
প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে নগরীকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত করব। তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থী ও সাবেক মেয়র সাক্কু একে অপরের বিরুদ্ধে নাটক করছেন। আমরা জানতে চাই-লিজের জায়গা, ড্রেন ও রাস্তার ওপর বহুতল ভবন করতে কে কত টাকা নিয়েছেন। লুটের টাকাগুলো কোথায়? এগুলো বের করতে হবে। কায়সার বলেন, ওনারা মিলেমিশে নগরীকে ভাগাড়ে পরিণত করেছেন, মাদকের নগরী বানিয়েছেন, তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। ওনাদের শুধু টাকার প্রয়োজন। আসুন আমরা লুটেরা থেকে কুমিল্লাকে মুক্ত করি।
কায়সার আরও বলেন, আমি শপথ করে বলছি-মাদক, দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করেনি। ইনশাআল্লাহ আমি তা রুখবই। পরিবর্তনে আমার প্রতি আস্থা রাখুন। আমি পরিবর্তন আনবই, দানবীয় শাসন অপসারণ করবই ইনশাআল্লাহ। আকু