রাষ্ট্রীয়ভাবে যে নদী দূষণ করা হয়, সেটা আগে বন্ধ করা দরকার। এছাড়া আজ পর্যন্ত নদী দূষণকারী ও দখলদারদের কোনো বিচারের নজির নেই। নদীরক্ষা আইন আছে, প্রয়োগ নেই। তাহলে নদী রক্ষা হবে কীভাবে।’
রোববার (২৪ এপ্রিল) বিশ্ব ধরিত্রী দিবস-২০২২ উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন ও জাতীয় নদী জোট আয়োজিত ‘বাংলাদেশ নদ-নদী’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য তুলে ধরেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
সভায় বাপার সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, আদালতের রায়ে বলা আছে, নদীর সীমানা আগে নির্ধারণ করতে হবে। দখলদারদের চিহ্নিত করতে হবে। অথচ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নদী সীমার ভেতরে ওয়াক ওয়ে পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে৷ এভাবেই ঢাকার নদী ধ্বংস করা হচ্ছে। অবৈধ উচ্ছেদ না করে বরং বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, নদী বাঁচাতে হলে আমাদের অভিন্ন নদীর যে ন্যায্য দাবি আছে, সেটা আদায় করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে আদায় যেভাবে করে, আমাদেরও আদায় করতে হবে।
শরিফ জামিল বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পরিবেশ কমিটির সভা করে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রিভার টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। সাতজন মন্ত্রীকে ও বাপাকে নিয়ে সেটা গঠন করা হয়। এই নদী বিষয়ক টাস্কফোর্স নদীর বিপক্ষেই কাজ করা শুরু করলো। কিন্তু আমরা যদি সেই মিটিংয়ে উপস্থিত হই, আমাদের কথা লেখা হয় না।
নদী দখলদারের শাস্তি নিশ্চিত হয় না অভিযোগ করে বাপার সাধারণ সম্পাদক বলেন, নদী দূষণ ও দখলদারদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হয় তাহলে নদী রক্ষা করবেন কীভাবে? আমরা আজ পর্যন্ত কোনো দখলকার, দূষণকারী, কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালন না করার জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে এমন দেখিনি। আজ যদি একজন সাধারণ মানুষ নদীতে এক টুকরি মাটি ফেলে, দেখবেন কালই এসিল্যান্ড এসে জরিমানা করবে। কিন্ত বড় বড় ভবন তৈরি হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে তাদের দেখা যায় না।
জাতীয় নদী জোটের আহ্বায়ক শারমিন মোরশেদ বলেন, আমার এতো বছরের আন্দোলনে আমি বলতে পারি, নদী দূষণ বেশি হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। আমি রাষ্ট্রকে দায়ী করবো এজন্য যে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ তারা করতে পারেনি। একটা কাজ করলে নদী বাঁচতে পারে, তা হলো নদী রক্ষার আইন বাস্তবায়ন করা।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, নদী দূষণ যেমন বন্ধ করা দরকার। তেমনই সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। সবাইকে নদী রক্ষার আওয়াজ তুলতে হবে। আমাদের আগে নির্ণয় করতে হবে, নদী কোথা থেকে কীভাবে দূষিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করি, আপনারা যে বর্জ্য ফেলছেন তা কোথায় যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষই বলতে পারবে না। কারণ আমাদের মানুষ এতোটাই অসচেতন এ বিষয়টি নিয়ে।
বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ডা. মো. আব্দুল মতিন, জাতীয় নদী জোটের আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ, বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলসহ নদী রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা।