রাজধানীর লালবাগ থানার নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মূল্যের বাংলাদেশি জাল টাকা এবং ভারতীয় জাল রূপি তৈরি করার একটি ঘরোয়া কারখানার সন্ধান পাওয়ার পাশাপাশি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- জাহাঙ্গীর আলম, আলী হায়দার, তাইজুল ইসলাম লিটন ও মহসিন ইসলাম মিয়া। এসময় তাদের হেফাজত থেকে তৈরিকৃত বিভিন্ন মূল্যমানের প্রায় ২০ লক্ষ ৫০ হাজার বাংলাদেশি জাল টাকা এবং দেড় লক্ষ ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও জাল টাকা ও রুপি তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন রকমের কালি, স্ক্রিন ফ্রেইম, বিশেষ ধরনের কাগজ, কেমিক্যালস, স্ক্যানার মেশিন, কাটার ও স্কেল ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার ও উদ্ধার সম্পর্কে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (সেবা) বলেন, রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে জালনোট ব্যবসায়ীরা বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে এই মর্মে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়। উক্ত তথ্য যাচাই বাছাই ও বিশ্লেষণ করে জাল মুদ্রা কারবারিদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় জাল মুদ্রা ব্যবসায়ী গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর আলম জাল টাকা ও রুপির একটি চালান সংগ্রহ করার জন্য নাটোর থেকে ঢাকায় আসছিল। তাকে অনুসরণ করে গোয়েন্দা পুলিশ। তার অবস্থান শনাক্ত করে আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল ২০২২) সকাল ১১:০০ টায় নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ছয়তলা বিল্ডিং এর চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় টাকা ও রুপিসহ গ্রেফতার করা হয় চক্রের জাল কারবারিদের। উক্ত ফ্ল্যাটটি গত ৫/৬ মাস ধরে ভাড়া নিয়ে রেখেছিল এ চক্রটি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পবিত্র রমজান মাসের আগে ও মাঝে বিপুল পরিমাণে জাল মুদ্রা তৈরি করে সমগ্র দেশে সাপ্লাই দেওয়া। গ্রেফতারকৃত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে জাল টাকা তৈরি এবং বিক্রি করার একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অষ্টম শ্রেণি পাস করা গ্রেফতারকৃত লিটন এই কারখানার মূল পরিচালক এবং সে নিজে মেকার। দীর্ঘদিন সে নীলক্ষেত এলাকায় কম্পিউটারের দোকানে গ্রাফিক্সের কাজ করত। এরফলে সে বিভিন্ন ধরনের জাল কাগজপত্র, দলিলাদি, জাল টাকা ও রুপি বানাতে পটু। লিটন বিশেষ ধরনের কাগজ কিনে জোড়া লাগানো, একটি কাগজে বঙ্গবন্ধুর বা গান্ধীর ছবি স্ক্রিন প্রিন্টিং বা জলছাপ দেয়া রংয়ের সমন্বয়ের কাজ করতে বিশেষ পারদর্শী। জাল টাকার নিরাপত্তা সুতা জোড়া লাগানো হয় আইকা বা অন্যান্য গাম দিয়ে। বঙ্গবন্ধু বা মহাত্মা গান্ধীর ছবি সে নিজে মূল টাকা থেকে স্ক্যানিং করে পেনড্রাইভে নিয়ে রাখে। নিরাপত্তা সুতা তৈরি করার জন্য ডায়াস কিনে নিত। জলছাপ দেয়া হলে দুইটি বিশেষ ধরনের কাগজ একসাথে জোড়া দিয়ে শুকানো হতো। এরপর টাকা প্রিন্টিংয়ে নেওয়া হতো। তার এ সকল কাজে সহযোগিতা করতো গ্রেফতারকৃত আলী হায়দার। গ্রেফতারকৃত আলী হায়দার টাকা তৈরিতে সহযোগিতাসহ এগুলো বান্ডিল আকারে বড় ডিলারের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজও করে থাকত। জাল টাকা তৈরি করার পরে ১২০০০- ১৫০০০ টাকায় বিক্রি করা হতো।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর ও মহসিন মূলত লিটনের কাছ থেকে জাল টাকা ১২০০০ থেকে ১৫০০০ টাকায় কিনতো। এরপর তারা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভে এগুলো বিক্রি করত। গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর নওগাঁ ,নাটোর, বগুড়াসহ দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলের ডিলারের মাধ্যমে এই জাল টাকা ও রুপি বিক্রি করে থাকতো। এরপর খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন শহরের ব্যস্ততম এলাকায় (যেমন-রেস্টুরেন্ট, ভোজ্য সামগ্রী, প্রসাধনী, পরিধেয় বস্ত্র ইত্যাদি) ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ভালো টাকার ভিতরে জাল টাকা ঢুকিয়ে দিত। গ্রেফতারকৃত লিটন জাল রুপিগুলো পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করেছিল দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় বিক্রি করার জন্য।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর যুগ্ম-কমিশনার ডিবি (উত্তর) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) এবং গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বিপিএম পিপিএম (সেবা) এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।