রোজা মানেই মুসলিমদের ঘরে ঘরে নানারকম মজাদার আর ঐতিহ্যবাহী খাবারের সামাহার। রোজার নিয়ম সব দেশের মুসলমানদের জন্য একই রকম হলেও দেশ অনুযায়ী একেক দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস একেক রকম। ভিন্ন ভিন্ন দেশে তাই ইফতারের আয়োজনেও বেশ ভিন্নতা চোখে পড়ে। আমাদের দেশের ইফতারের আয়োজনে থাকে কত রকমের খাবার। অন্যান্য দেশেও তাই। সারাদিন রোজা থাকার পর রোজাদারেরা চেষ্টা করেন সুস্বাদু এবং বৈচিত্রময় খাবার খেতে। জানুন ইফতারে কোন দেশের মানুষ কী খায়-
বাংলাদেশ
আমাদের দেশের ইফতারের আয়োজনে থাকে নানা রকম খাবার। খেজুর, পিঁয়াজু, বেগুনি, হালিম, আলুর চপ, জিলাপি, শরবত, মুড়ি ও ছোলা হলো কমন ইফতারি। এর বাইরে ব্যতিক্রমী আইটেম হিসেবে থাকতে পারে সমুচা, ফিশ কাবাব, মাংসের কিমা ও মসলা দিয়ে তৈরি কাবাবের সঙ্গে পরোটা, মিষ্টি ও ফল। কিছু অঞ্চলের ইফতারে খিচুড়ি, চিড়া ইত্যাদিও থাকে।
সৌদি আরব
সৌদি আরবের ইফতারিতে থাকে কুনাফা, ত্রোম্বা, বাছবুচান্ডর নামক নানা রকম হালুয়া। এছাড়া রয়েছে সাম্বুচা, যা দেখতে ঠিক সমুচার মতো, এর ভেতর থাকে মাংসের কিমা। তবে মরিচ থাকে না। এছাড়া থাকে সালাতা (সালাদ), সরবা (স্যুপ), জাবাদি (দই), লাবান, খবুজ (ভারী ছোট রুটি) বা তমিজ (বড় রুটি)। এছাড়াও খেজুরের নানা রকম লোভনীয় আইটেম তো রয়েছেই।
দুবাই
এখানকার ইফতারিতেও থাকে নানা রকম মুখরোচক খাবার। রুটি, মাংসের চপ (যা ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি- স্থানীয় ভাষায় ওউজি), মসুর ডালের স্যুপ, সালাদ ইত্যাদি থাকে। তাদের এই আয়োজনকে সম্মিলিতভাবে ‘মেজে’ বলা হয়।
মিসর
দেশটির ইফতারিতে তাদের প্রধান মেন্যু কুনাফা ও কাতায়েফ। এগুলো মূলত কেকজাতীয় খাদ্য। যেগুলো আটা, চিনি, মধু ও বাদাম দিয়ে তৈরি হয়।
ইরান
এখানকার ইফতার আয়োজনে খুব বেশি কিছু থাকে না। চায়ে (চা), লেভাস বা বারবারি নামের এক ধরনের রুটি, পনির, তাজা ভেষজ উদ্ভিদ, মিষ্টি, খেজুর ও হালুয়া দিয়েই চলে সেখানকার ইফতার।
মস্কো
মস্কোতে ইফতার আয়োজনে খেজুর ও অন্য ফল রাখা হয়। এরপর স্যুপ, রুটি ও বিভিন্ন স্থানীয় খাবারের আয়োজন তো রয়েছেই। রাশিয়ান ঐতিহ্যবাহী কাভাসকেও তৃষ্ণা মেটাতে সেরা পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সিরিয়া
হালুয়ার জন্য বিখ্যাত শহর সিরিয়া। কথিত আছে, আরব দেশগুলোর মধ্যে ভালো হালুয়া তৈরি করে সিরিয়ার লোকেরা। তাদের হালুয়া যে কত নকশার হতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এছাড়া তারা ইফতারের পর দিজাজ সয়াইয়া, খবুজ, সরবা খায়।
পাকিস্তান
খেজুর ও পানি দিয়ে তাদের ইফতার শুরু হয়। তবে তাদের আয়োজনে থাকে হরেক রকমের চোখ ধাঁধানো খাবার। চিকেন রোল, স্প্রিং রোল, শামি কাবাব এবং ফলের সালাদের পাশাপাশি মিষ্টি ও ঝালজাতীয় খাদ্য, জিলাপি, সমুচা, নিমকি ইত্যাদি।
ভারত
ভারতের একেক রাজ্যে ইফতারির একেক রকম পদ হয়। হায়দরাবাদের লোকজনের ইফতার হয় হালিম দিয়ে। তামিলনাড়ু ও কেরালায় ইফতার হয় ননবো কাঞ্জি দিয়ে। এটি তৈরি হয় ভাত, খাসির মাংস, সবজি ও মসলা দিয়ে। পাশাপাশি থাকে বন্ডা, পাকুড়া- এসব খাবার।
ব্রিটেন
ইফতারিতে ব্রিটিশ রোজাদাররা খেজুর, ফল, স্যুপ, জুস, রুটি, ডিম, মাংস, চা-কফি ইত্যাদি গ্রহণ করে থাকে।
ইতালি
ইতালিতে রোজাদাররা বার্গারজাতীয় খাদ্য, নানাবিধ ফল যেমন- মাল্টা, আপেল, আঙুর, বিভিন্ন ফলের রস ইত্যাদি দিয়ে ইফতার করেন।
তুরস্ক
‘রমজান কিবাবি’ নামক খাদ্যটির ইফতার হিসেবে আলাদা কদর রয়েছে এখানে। এটা বিশেষ ধরনের কাবাব। এছাড়া রোজা ভাঙতে এখানে নানা রকম শরবতের ব্যবহার বেশ পুরনো।
আমেরিকা
আমেরিকায় ইফতারসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেজুর, খুরমা, সালাদ, পনির, রুটি, ডিম, মাংস, ইয়াগার্ট, হট বিনস, স্যুপ, চা ইত্যাদি।
কানাডা
এখানকার মুসলমানদের ইফতারিতে খেজুর, খুরমা, পনির, সালাদ, ফল, স্যুপ, জুস, রুটি, ডিম, মাংস, চা-কফি ইত্যাদি থাকে।
অস্ট্রেলিয়া
এই দেশে ইফতারিতে স্যান্ডউইচ, পনির, মাখন, দুধজাতীয় খাবার, নানাবিধ ফল ও ফলের রস খাওয়া হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া
ইফতারিতে এখানকার মুসলমানরা নুডলস, স্যুপ, ফলের রস, বিভিন্ন প্রকারের ফলফলাদি খেয়ে থাকে। সাহরিতে মাংস ও রুটি।
পর্তুগাল
এখানকার মুসলমানরা ইফতারি হিসেবে পাস্টার দি নাতা (এক প্রকার কেক) ও সারডিন মাছের কোপ্তা বেশ পছন্দ করে। এ ছাড়া রয়েছে প্রেগোরোজ, ট্রিনচেডো, প্রাউজ (চিংড়ি), স্প্রিং গ্রিল ও স্যুপ।
জাপান
জাপানিজ মুসলমানদের ইফতারি আইটেমে রয়েছে জ্যুস, স্যুপ ও মাশি মালফুফ, যা আঙুর, বাঁধাকপির পাতা ও চাল মিশিয়ে বানানো হয়। এ ছাড়া রয়েছে মটরশুঁটি ও গরুর কলিজা মিশ্রিত কিবদা, রুটিতে মোড়ানো মাংসের কিমা ইত্যাদি।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া স্থানীয় লোকেরা ইফতারে আখের রস ও সয়াবিন মিল্ক খান, যাকে তাদের ভাষায় বারবুকা পুয়াসা বলা হয়। এছাড়া স্থানীয় খাবারের মধ্যে থাকে লেমাক লাঞ্জা, আয়াম পেরিক, নাসি আয়াম, পপিয়া বানাস ও অন্যান্য খাবার। মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ মসজিদে রোজায় আসরের নামাজের পর স্থানীয়দের ফ্রি রাইস পরিজ দেওয়া হয়।
স্পেন
এখানকার মুসলিমরা ইফতারিতে হালাল শরমা, ডোনার কাবাব, হামাস যা তৈরি করা হয় ছোলা, তিল, জলপাই তেল, লেবু, রসুন ইত্যাদি দিয়ে। এটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের খাবার। লাম্ব কোফতা, আলা তুরকা, পাইন অ্যাপেল, টমেটো সালাদ ইত্যাদি খেয়ে থাকেন।
তিউনিসিয়া
উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে ইফতারে খেজুর, দুধ ও কিসমিসের ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও থাকে বিভিন্ন ধরনের পিঠা। এছাড়া তারা রমজানে ‘রাফিসা’, ‘মাদমুজা’, ‘আসিদা,’ ‘বারকুকাস’ নামক বিশেষ খাবারের আয়োজন করে।