1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

বদলে গেছে জীবন আর্দশ গ্রা‌মের

নাগ‌রিক খবর ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২
  • ১০২ বার পঠিত

কেউ চরে, কেউ নদীর ধারে, কেউবা বাপের বাড়িতে বোঝা হয়ে। কারোরই ছিল না স্থায়ী ঠিকানা। দিনের আয় দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন। সেখানে বাড়ি করার স্বপ্ন তো দুঃসাধ্য। এমন জীবনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নতুন আশা জাগিয়েছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব মানুষ স্থায়ী নিবাসের পাশাপাশি পেয়েছে এগিয়ে যাওয়ার অবলম্বন। সমাজের মূলস্রোতে উঠে আসার সুযোগ।

সিরাজগঞ্জ সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের ‘আদর্শগ্রাম’ ঘুরে এ চিত্র চোখে পড়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১৫ একর জমিতে ২৬৬ পরিবারকে সেমিপাকা ঘরসহ বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলার মূল্যবান এ যায়গাটিতে আশ্রয়ণ করার পাশাপাশি তাদের জন্য নানা নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন বলছে, এটি হবে আদর্শগ্রাম। এখানে শহরের সব সুবিধা থাকবে।

সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও জেলার হর্টিকালচার সেন্টারের মাঝের নান্দনিক অবয়বে গড়ে তোলা হয়েছে খোকশা বাড়ির এই আদর্শগ্রাম। স্থানীয় প্রভাবশালীদের থেকে দখলমুক্ত করে সরকারি খাস জমিতে গড়া এই গ্রামে পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য পাকা ড্রেন করে দেওয়া হচ্ছে। রাখা হয়েছে- খেলার মাঠ ও সুশোভিত মসজিদ। মাঝখানে পরিকল্পিত সড়কও করে দেওয়া হয়েছে। সবার জন্য আছে একটি বড় পুকুর।

সরেজমিনে কথা হয় সুবিধাভোগী সাজেদা বেগমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্বামী নিয়ে তার সংসার। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে, করোনায় পড়াশোনা বন্ধ হওয়ায় এখন আর পড়ে না। স্বামী রাজের জুগালি হিসেবে কাজ করেন। তার একার আয়েই সংসার চলে। পাশেই খাগা স্বামীর বাড়ি, কিন্তু সেখানে তাদের জমি নেই। বাপের বাড়ি বাহুলি ছিলেন। এক বছর হয়েছে আশ্রয়ণের বাড়ি পেয়ে এখানে বসবাস করছেন।

আগের অবস্থা আর এখনকার পার্থক্য কী? জবাবে তিনি বলেন, আগের চেয়ে ভালোই তো আছি। এখান তো কেউ বলবে না, বাড়ি থেকে নেমে যা। এটাই বড় শক্তি।

তার প্রতিবেশী রহিমা বেগম (৫১)। অনেক আগেই স্বামী মারা গেছেন। ২০ বছর বয়সী এক ছেলে নিয়েই তার জীবনযুদ্ধ। ছেলেটা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। আগে বাহুলি ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামে ছিলেন। তিনি বলেন, ওখান থেকে এখানে ভালো আছি। বাড়ি ছিল না, এখন হয়েছে। আমি ১৮টা কবুতর পালি, লাউগাছসহ বিভিন্ন শাক-সবজি আবাদ করি। এতেই আমাদের ছোট্ট সংসার ভালোভাবে চলে যায়।

আরেক নারী শাহীনুর (২৫), স্বামী শাহাদাৎ হোসেন। রাজমিস্ত্রীর জুগালি দেয়। দিনে ৪০০ টাকা হাজিরা। তার আয়ে চলে সংসার। স্বামীর কোনো যায়গা না থাকায় খোকসা বাড়ি চরপাড়া বাপের বাড়িতে ছিলেন। তিন সন্তান নিয়ে তার সংসার।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিয়ের পর ভাড়া বাসায় থাকতাম, এখন নিজের ভিটেমাটি হয়েছে। একটা ঠিকানা হয়েছে। নিজে স্বাধীন মতো চলি। নিজে না পড়লেও সন্তাকে নিস্তারাণী স্কুলে দিয়েছি।

এই নারীও আশ্রয়ণের এই বাড়িতে দুইটি ছাগল, ৮টি মুরগি পালন করেন। বাড়ির আঙিনায় করেছেন মরিচ-বেগুন-পেঁপে-লাউ- সবজি।

সাজেদা, রহিমা ও শাহীনুরের মতো এই আদর্শগ্রামে ঠাঁই পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, বিধবা, রিকশাচালক, দিনমজুর, স্বামী পরিত্যক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণির অসহায় মানুষ। যাদের ন্যূনতম মাথা গোজার ঠাঁই ছিল না। তারা এখন স্থায়ী ঠাঁই পেয়ে নতুন নতুন কিছু করে খাচ্ছেন। সন্তানদের নিয়েও দেখছেন স্বপ্ন।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি। খোকশাবাড়িতে তিনধাপে এখানে ২৬৬ পরিবারকে বাড়ি করে দিয়েছি। এমনভাবে করেছি, কোনোভাবে তারা যেনো নিজেদের অবহেলিত না ভাবে। যায়গাটার বেশ দামি। পাশাপাশি এখানে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে একটা আদর্শ গ্রাম করছি। শহরে সব সুবিধা নিশ্চিত করছি। পাশে স্কুল আছে, মসজিদ করেছি। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, হর্টিকালচার সেন্টার আছে, শুটিং ক্লাব হচ্ছে। পুকুর ও মাঠ রেখেছি, পাকা ড্রেনেজ ব্যবস্থা করেছি, সড়কও করে দিচ্ছি।

শুধু খোকসাবাড়িই না একইভাবে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে আশ্রয়ণের ঘর দেওয়া হয়েছে হিজড়া জনগোষ্ঠীর বড় একটা সংখ্যাকে। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় করা হয়েছে এমন অবহেলিত মানুষের জন্য ঘর। এভাবে সারাদেশে তিন ধাপে ঘর পেয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৮০৩ পরিবার।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com