আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। দেশের ব্যবসায়ীরা ‘লজ্জাজনক’ এ কাজ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। বুধবার (২৩ মার্চ) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির ১৪তম বৈঠকে এ মন্তব্য করা হয়
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। এতে অংশ নেন কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এবং মুহিবুর রহমান মানিক।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে তেলের দাম বাড়িয়ে লজ্জাজনক কাজ করেছেন। তারা দেশবাসীকে লজ্জায় ফেলেছেন। দেশবাসী এ লজ্জা থেকে পরিত্রাণ চায়। সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে তেলের দাম কমিয়েছে। ভোক্তা অধিকার অভিযান চালিয়েছে। টিসিবি মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়েছে।
জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। খোলা তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছিল প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে মার্চের শুরু থেকে আরও দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সরবরাহের তীব্র সংকটও তৈরি হয় সেসময়। আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিল গেট থেকে তেল সরবরাহ করছেন না বলে অভিযোগ ওঠে। ওই সময়ে সরকার নির্ধারিত আগের দামের চেয়ে লিটারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
অন্যদিকে রডের দাম বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
রডের দাম বাড়া প্রসঙ্গে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘হঠাৎ করে রডের দাম বেড়ে গেল কেন? এখানে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে কি না, সেটা খুঁজে দেখতে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটি ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে অভিযান পরিচালনা করতে বলেছে।’
জানা গেছে, চলতি মার্চ মাসের শুরু থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে নির্মাণসামগ্রী রডের দাম। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুরু অর্থাৎ ১৫ মার্চ প্রতি টন রডের দাম বেড়ে ৯১ হাজারে ওঠে, যা গত মাসেও ছিল ৭৭ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। উৎপাদনকারীরা দাম বাড়ার পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করেন। তারা দাবি করেন, যুদ্ধের কারণে কাঁচামালের সংকট হওয়ায় রডের দাম বাড়ছে।
তবে খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা বলছেন, ওই যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই দাম বাড়ানো হচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে দেশের বাজারে রডের টন সর্বোচ্চ ৮১ হাজার টাকায় উঠেছিল, যা তখন ইতিহাসের রেকর্ড দাম ছিল।
টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘দুর্বল টিসিবি দিয়ে বড় কাজ করা যায় না। তাদের আরও বাজেটের প্রয়োজন। প্রতি বিভাগে গুদাম প্রয়োজন। আমরা এ কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করেছি।’