দেশের ৬৫ শতাংশ নারী নবজাতকদের পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ান। বিশ্বের আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে এ হার সর্বোচ্চ। তবে নবজাতক বা শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ফর্মুলা দুধের আগ্রাসী বিপণন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) যৌথ এক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ইউনিসেফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ জরিপের তথ্য জানানো হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া মা-বাবা ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ৫১ শতাংশ অভিযোগ করেছেন, তারা ফর্মুলা দুধ তৈরিকারক কোম্পানিগুলোর ‘লক্ষ্যনির্দিষ্ট’ বিপণন কার্যক্রমের শিকার। কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করছে।
‘ফর্মুলা দুধের বিপণন কীভাবে শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বাংলাদেশসহ আট দেশে মা-বাবা, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা হয়েছে। অন্য সাতটি দেশ হলো- চীন, মেক্সিকো, মরক্কো, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনাম। আটটি দেশের বিভিন্ন শহরের সাড়ে আট হাজার মা-বাবা ও অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর এ জরিপ পরিচালিত হয়।
জরিপের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে যত নারী জরিপে অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৯২ শতাংশ এবং চীনের ৯৭ শতাংশ এমন ফর্মুলা দুধের বিপণনব্যবস্থার শিকার হয়েছেন। এ পরিস্থিতি তাদের ফর্মুলা খাবার বেছে নেওয়ার চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের উপপ্রতিনিধি ভিরা মেন্ডনকা বলেন, দেশের সিংহভাগ নারী শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চান। তবে তারা প্রায়ই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সমর্থন পান না। ফর্মুলা দুধ বিপণনের বার্তাগুলো ভয় ও সন্দেহের বীজ বপন করে। মুনাফা নয়, বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে মায়েদের এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ খাতের বিপণন কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে অনলাইনে অনিয়ন্ত্রিত ও আক্রমণাত্মক সুনির্দিষ্ট প্রচার, স্পন্সরড পরামর্শ প্রদানকারী নেটওয়ার্ক ও হেল্পলাইন; প্রচার ও উপহার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও সুপারিশগুলোকে প্রভাবিত করার চর্চা। মা-বাবা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যে বার্তাগুলো পান, তা প্রায়ই বিভ্রান্তিকর, বৈজ্ঞানিকভাবে অপ্রমাণিত। এগুলো বুকের দুধের বিকল্প খাদ্য বিপণনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম (কোড) লঙ্ঘন করে। অথচ কোডটি শিশুখাদ্য তৈরিকারকদের আক্রমণাত্মক বিপণন কার্যক্রম থেকে মায়েদের রক্ষা করতে ১৯৮১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পাস হওয়া একটি যুগান্তকারী জনস্বাস্থ্য চুক্তি।
বাংলাদেশে ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি বারদান জাং রানা বলেন, নবজাতক ও ছোট শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর এবং ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউট (বিএমএস) কোড পর্যবেক্ষণ বিষয়ে ডব্লিউএইচওর নির্দেশিকা সুস্পষ্ট। এটি নিশ্চিত করা জরুরি যে, ফর্মুলা দুধের বাজারজাতকরণ এবং বিপণনের কারণে মায়েরা যেন বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত না হন। বিএমএসের আগ্রাসী সামাজিক মিডিয়া বিপণনকে মোকাবিলা করার প্রয়োজন আরও জরুরি।