“কুমিল্লার বুড়িচংয়ে মাটিবাহী ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির চালকসহ ৫ জনের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক ট্রাক চালক রাকিবুল হাসান রবিনকে (১৯) সদর দক্ষিণ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর সদস্যরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের তুতবাগান নামক স্থানে নাম্বারবিহীন মাটিবাহী ড্রামট্রাক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটি যাত্রীবাহি সিএনজিকে পিছন থেকে ধাক্কা দিলে সিএনজি চালকসহ ঘটনাস্থলেই পাঁচজন যাত্রী নিহত হয়। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে প্রাথমিক সিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর একটি হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, কুমিল্লার বুড়িচংয়ের সাদকপুর গ্রামের মৃত ছাফর আলীর ছেলে মোঃ জুলহাস মিয়া (৬০), একই গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৫), কংশনগর গ্রামের দৌলত খানের ছেলে মোঃ জালাল (৩৭), আবদুল মতিনের ছেলে মোঃ আলমগীর (২৭), দেবিদ্বারের ছগুরা গ্রামের মোঃ ফরিদ মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৩)।
দুর্ঘটনায় আহত কাঁচামাল ব্যবসায়ী বুড়িচংয়ের রামপুর গ্রামের খোরশেদ আলম (৬০) বর্তমানে লাইফ সার্পোটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।দূর্ঘটনা পরবর্তীতে ঘাতক ড্রাইভার ড্রাম ট্রাকটি রেখে পালিয়ে যায়।
উক্ত দূর্ঘটনায় নিহত সিএনজি চালক মোঃ জুলহাস মিয়ার পরিবারের সদস্য বাদী হয়ে কুমিল্লার বুড়িচং থানায় সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব একটি ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১, সিপিসি-২ ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লার সদর দক্ষিণের গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের মুরাপাড়া গ্রাম হতে সিএনজি যোগে পালানোর সময় ঘাতক ড্রাম ট্রাকটির চালক রাকিবুল হাসান রবিনকে গ্রেফতার করে। সে বুড়িচংয়ের মিরপুর গ্রামের মোঃ খোরশেদ আলমের ছেলে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান রবিন জানায়, সে ৫ম শ্রেণী পাশ একজন বালক। তার পিতা একজন সিএনজি চালক এবং তার চাচা একজন ড্রামট্রাক চালক। ছোটবেলা থেকেই তার বাবা এবং চাচার ড্রাইভিং করা দেখে তার মনেও ড্রাইভিং করার ইচ্ছা জাগে। এরই প্রেক্ষিতে সে তার বাবার সাথে সিএনজি চালানোর মাধ্যমে ড্রাইভিং পেশা শুরু করে। ২/৩ বছর পূর্বে তার চাচার সাথে ড্রামট্রাক এর হেলপারি শুরু করে।পরবর্তীতে ড্রামট্রাকের হেলপারি ছেড়ে দিয়ে তার ওস্তাদ মোঃ মনির (৩০) এর সাথে গাড়ি চালায়। গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান রবিনের কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বা কোন ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর কোন প্রশিক্ষণ ছিলনা।পরবর্তীতে সে ওস্তাদের বুদ্ধিতে সমাজতার মাধ্যমে অল্প টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মালিকের ড্রাম ট্রাক চালানো শুরু করে।
দূর্ঘটনার পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান রবিন তুতবাগান রাস্তার পাশে অপর একটি ড্রাম ট্রাকে করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে মালিককে ফোন করে দূর্ঘটনার বিষয়টি জানায়। পরবর্তীতে সে ময়নামতি হাসপাতালে সকাল ০৭:০০ ঘটিকার সময় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গোপনে কুচাইতলী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। চিকিৎসা শেষে তার মামার বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন থানার কনেশতলা গ্রামে আত্মগোপনে চলে যায়। মালিক মোঃ আলেক (৫৫) তাকে নূন্যতম ১ বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দিলে সে প্রথমে তার মামার বাড়ি কুমিল্লার সদর দক্ষিণের কনেশতলা গ্রাম আত্মগোপনে যায়। পরবর্তীতে রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আচ করতে পেরে ভয়ে অন্যত্র আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে সিএনজি যোগে পালানোর সময় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান রবিন জানায় যে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা হতে সারারাত ড্রাম ট্রাকটি করে মাটি ভর্তি করে কুমিল্লার দেবপুর থেকে ঘোষনগরে সে একাধিক ট্রিপ মারে এবং প্রতিটি ট্রিপের উপর তার অধিক কমিশন রয়েছে। অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সে ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালাতো। আনুমানিক সাড়ে ৫টায় দেবপুর থেকে ঘোষনগরের উদ্দেশ্যে মাটি বোঝাই ড্রামট্রাকটি নিয়ে সে রওনা করে। রাস্তায় অধিক কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক রবিন দ্রুত ট্রিপ মারার জন্য বেপরোয়া গতিতে ড্রামট্রাকটি চালাচ্ছিল। অধিক কুয়াশা,সারারাত ক্লান্তিহীন গাড়ি চালানোও অতিরিক্ত গতির কারণে তুতবাগান এলাকায় যাত্রীবাহি সিএনজি চালক মোঃ জুলহাস মিয়া (৬০)কে দূর থেকে লক্ষ্য করতে পারেনি। গাড়ীর অধিক গতি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি সে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দূর্ঘটনাটি সংঘটিত করে।
সে আরও জানায়, গাড়ি থামানোর জন্য ব্রেক করলেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রায় ৫০ ফুটের মতো সামনে চলে যায়। পরবর্তীতে সে স্থানীয় লোকজনের ভয়ে তার চালানো দূর্ঘটনা কবলিত ড্রামট্রাকটি রেখে পিছনে থাকা অন্য আরেকটি ড্রামট্রাকেউঠে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে। ঘটনার পর থেকেই দূর্ঘটনা কবলিত ড্রামট্রাকটির মালিক মোঃ আলেক (৫৫) আত্মগোপনে রয়েছে এবং তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নিমিত্তে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা এর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে কুমিল্লার বুড়িচং থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।