চট্টগ্রামে প্রায় ১২শ’ পোশাক শ্রমিকের ২০ কোটির মতো জমানো টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে শ্যামা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কার্যালয় বন্ধ করে ওই সমিতির কর্তারা গা-ঢাকা দেওয়ার পর শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেছেন আমানতকারী শ্রমিকরা।
নগরের ৩৮নং দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর হিন্দু পাড়া এলাকায় ওই সমিতির কার্যালয়ের সামনে এই আন্দোলন চলছে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বন্দর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর থানার ৩৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মধ্য হালিশহর হিন্দু পাড়া এলাকায় প্রায় ১০-১২ বছর ধরে স্থানীয়দের কাছ থেকে নির্ধারিত মুনাফায় আমানত সংগ্রহ করছিল শ্যামা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। রিংকু দাশ ও তার স্ত্রী জয়শ্রী দাশ প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালক। পাশেই দেশের বড় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল সিইপিজেড থাকার কারণে পুরো এলাকাটি পোশাক শ্রমিক অধ্যুষিত। এখানে কম আয়ের পোশাক শ্রমিকদের কাছ থেকে দিন কিংবা সপ্তাহ হিসেবে ৫০, ১০০, ২০০ টাকা করে সঞ্চয় নিতেন (আমানত সংগ্রহ) প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা।
আমানতকারীদের একজন জোৎস্না বেগম। নিজের মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রায় ১০ বছর ধরে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা জমিয়েছেন শ্যামা বহুমুখী সমবায় সমিতিতে। এখন প্রতিষ্ঠানটি লাপাত্তা হওয়ার কারণে জীবনের সঞ্চিত এই টাকা হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন জোৎস্না।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মেয়ে বড় হচ্ছে। তার বিয়ের জন্য ৫০, ১০০, ২০০ টাকা করে জমিয়েছি। ওই সমিতিতে আমার এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা জমা রয়েছে। এখন আমার মেয়ের কী হবে?’
একই কায়দায় পোশাক শ্রমিক ইসমাইল হোসেন, পেয়ারা বেগম, সামশুদ্দিন, জামাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে কতজনের কত টাকা আমানত রয়েছে সেটা নির্ভরযোগ্য কোনো পর্যায় থেকে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বলেন, ১২-১৫শ’ লোকের প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো নিয়ে পালিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক রিংকু-জয়শ্রী দম্পতি।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর হিন্দু পাড়ায় শ্যামা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি এনজিও কম আয়ের মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করতো। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিল। এখানে বেশিরভাগ পোশাক কর্মী। তারা অল্প অল্প করে টাকা জমিয়েছেন। ৮-১০ বছরে এ টাকার পরিমাণ অনেক হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিষ্ঠানটির অফিস বন্ধ থাকায় লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শত শত মানুষ জড়ো হয়েছে। তবে এখানে কার, কত টাকা জমানো আছে, আমানতকারীর সংখ্যা, কিংবা জমানো টাকার পরিমাণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।