প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ টাকা আত্মসাতকারী মোঃ রবিউল হোসেন @ জ্বীনের কবিরাজকে (২৮) গ্রেফতার করে র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর সদস্যরা।
র্যাব জানায়, গত ৯ জানুয়ারি মোসাম্মদ ইবা, পিতা-নজরুল হাওলাদার, মাতা- মায়া বেগম সাং-হাসিমপুর মিয়া
বাড়ী, থানা-কচুয়া, জেলা-চাদঁপুর এর নিকট অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কয়েকবার কল আসলে সে কলটি রিসিভ করে না।
পরবর্তীতে একই দিন গভীর রাতে একই নাম্বার হতে আরো কয়েকবার কল আসলে ভুক্তভোগী অনেকটা বিরক্ত হয়ে কল
রিসিভ করলে অপর প্রান্ত হতে একটি যুবক জানায় তার নাম জ্বীনের কবিরাজ এবং সে সকল প্রকার সমস্যার সমাধান
দিতে জানে। সে তার একজন রোগীর নিকট কল দিতে গিয়ে ভুলবশত সে ভুক্তভোগীকে ফোন করে বলে জানায়।
অতঃপর দুজনে ফোন কেটে দেয়। পরবর্তীতে এই কবিরাজ পুনরায় এই ভূক্তভোগীকে পরদিন ফোন করে জানায় তার
পরিবারে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধান কল্পে উল্লেখিত জ্বীনের কবিরাজের স্বরনাপর্ণ হতে পারে,
তবে এই কবিরাজকে তিনি দেখতে পাবেন না কারণ লোকালয়ে সে হাজির হয় না। পরবর্তীতে কবিরাজ ভুক্তভোগীর অগোচরে তার এলাকায় গিয়ে পারিবারিক সমস্যা, স্বামী কি করে, কোথায় থাকে এবং বাড়ীর পারিপাশ্বিক অবস্থান জেনে সে বুঝতে পারে এই মহিলাকে আয়ত্বে আনতে পারলে সে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা লাভবান হবে।
পরবর্তীতে কল দিয়ে উক্ত কবিরাজ ভ‚ক্তভোগীর সাথে ফোনালাপে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং কথা বলার বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীর অজান্তে সংগৃহীত তথ্যের বর্ণনার মাধ্যমে ভ‚ক্তভোগীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেন। বিশ্বাস অর্জনের ফলে কবিরাজ সিলেটের জৈন্তাপুর নামক ঠিকানা (ভুয়া ঠিকানা) হতে কুরিয়ারের মাধ্যমে ৫টি তাবিজ প্রেরণ করে।
কবিরাজ বলেন তার কাছে জ্বীন আছে, সে ৪/৫ টা জ্বীন পালন করে এবং তার কাছে সবসময় জ্বীন থাকে ভুক্তভোগীর সৌদি প্রবাসি স্বামীর শারিরীক সম্যস্যার সমাধান করতে হলে জ্বীনদেরকে দিতে হবে ১(এক) লক্ষ পাঞ্জাবী এবং ১(এক)লক্ষ টুপি এবং তাহা না দিলে ভ‚ক্তভোগীর স্বামী ও সন্তান মারা যাবে বলে ভয় দেখায়। কবিরাজ আরো বলে তাদের বাড়ীতে বদজ্বীনের নজর পড়েছে, বদজ্বীন থেকে মুক্ত হতে হলে ভ‚ক্তভোগীকে গরু, মহিষ, শুকুর বলি দিতে হবে। ভুক্তভোগী সরল মনে স্বামীর শারিরীক সমস্যা সমাধান, সন্তানদের সু¯’্যতার জন্য বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে কবিরাজকে বিভিন্ন ধাপে সর্বমোট ৫,৫১,০০০/- টাকা প্রদান করেন।
সর্বশেষ ১৬/১১/২০২১ তারিখে ভ‚ক্তভোগীতে এক লক্ষ টাকা দিতে বলে,টাকাটা দিতে না পারলে ভ‚ক্তভোগীর স্বামী দেশের বাহিরে মারা যাবে এমন একটি কথা বলে সর্বশেষ এক লক্ষ টাকা বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করে। উক্ত টাকা প্রেরণের ২-৩দিন ভ‚ক্তভোগীর স্বামী শারিরীকভাবে সুস্থ না হলে তিনি বারংবার বিভিন্ন নাম্বারে উক্ত কবিরাজকে ফোন করে সবগুলো নাম্বার বন্ধ পেয়ে সে বুঝতে পারে সে প্রতারিত হয়েছেন।
অতঃপর ভুক্তভোগী বিষয়টি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করতঃ সিলেটের জৈন্তাপুর গিয়ে এই কবিরাজকে খুজে এবং সেখানে এই ধরনের নামের কাউকে না পেয়ে তাহারা পুনরায় ফেরত আসে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী মহিলা এলাকার মানুষের কাছে জানতে পারে র্যাবের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান পাবে।
এ প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী ২ ফেব্রæয়ারি র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লাতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-১১,সিপিসি-২ এর গোয়েন্দা । গোয়েন্দা তৎপরতা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ১২ জানুয়ারি ২০২২ বিকাল ১৭০০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর একটি আভিযানিক দল জ্বীনের কবিরাজ মোঃ রবিউল হোসেন @ জ্বীনকে গ্রেফতার করে।