আপনার পরিবারের একজন যিনি আপনার সঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকেন, একঘরে থাকেন, তিনি মারা যাবেন।’ এভাবেই মধ্যরাত থেকে ভোর ৫টার মধ্যে সহজ-সরল লোকজনকে ফোন দিত জিনের বাদশাহ পরিচয় দেওয়া প্রতারক। পরিবারের লোকজনের ক্ষতি হবে- এমন ভয় দেখিয়ে বিকাশ, নগদ এবং রকেটে টাকা আদায় করতো।
জিনের বাদশাহ পরিচয় দেওয়া প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে গাইবান্ধা থেকে জিনের বাদশা পরিচয়দানকারী তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতাররা হলো- আব্দুল গফ্ফার, মো. লুৎফর রহমান ও মো. শামীম। তাদের বয়স ২৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মালিবাগের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গ্রেফতাররা গাইবান্ধার বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মসহ ক্যাবল নেটওয়ার্কের লোকাল চ্যানেলে জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা, বিদেশে যাওয়ার সুব্যবস্থা, দাম্পত্যকলহ দূর করা, বিবাহের বাধা দূর করা, চাকরিতে প্রমোশন, কম দামে স্বর্ণ ক্রয়, বদ জিনকে বিতাড়িত করা, খন্নাস জিনকে পাতিলবন্দি করা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞাপন দিত।
সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন মানুষ যোগাযোগ করলে ভিন্নকণ্ঠে কথা বলে নিরীহ সরলমনা মানুষদের ফাঁদে ফেলে এবং পরে তাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে প্রিয়জনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ করতো। জিনের বাদশা সেজে এই প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল।
এছাড়াও তারা মানুষকে মধ্যরাতে ফোন করে টাকা চাইতো। তারা বলতো, কেউ যদি জিনের বাদশাহকে টাকা দেয়, তাহলে সেই টাকার উসিলায় টাকা প্রদানকারী প্রচুর ধনসম্পদ লাভ করবেন। সৃষ্টিকর্তার রহমত তার ওপর বর্ষিত হবে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, পুরুষ ও নারী ভিকটিমদের প্রতারণার জন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন কৌশল নিয়ে থাকে। পুরুষদের ধনসম্পদ আর নারীদের স্বর্ণালঙ্কারের লোভ দেখানো হয়। প্রাথমিকভাবে তারা মধ্যরাতে ভিকটিমদের ফোন দিয়ে এতিমদের খাওয়ানোর নামে দেড় থেকে তিন হাজার টাকা নেয়। এরপর ধীরে ধীরে মোটা অংকের টাকা চায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জিনের বাদশা সেজে প্রতারণা করে বিভিন্ন লোকজনের অসহায়ত্বের সুযোগে তাদের সর্বস্বান্ত করার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানান মুক্তা ধর।
তিনি বলেন, তারা গভীর রাতে জিনের বাদশা ও পির-দরবেশ সেজে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বিকাশ, নগদ, রকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে গত ছয় মাসে আনুমানিক ৫০ লাখের বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
তাদের এই প্রতারণার বিষয়ে রাজবাড়ীর কালুখালি থানায় একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।