সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, একটা সময় আমরা খাদ্য সংকট দূর করতে চেয়েছি। এখন সরকার চায় নিরাপদ ও পুষ্টিসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে। পরে গুণগতমানের আরও সমৃদ্ধ খাদ্য সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করবে। খাদ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে। ল্যাবরেটরিতে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম পরীক্ষা করে এর গুণগত মান ও পুষ্টিমান নিশ্চিত করা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য হচ্ছে দেশে গর্ভবতী মা, ছোটশিশু, যুবক ও বৃদ্ধরা যেন পরিপূর্ণ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পাযন। এভাবে সবার জন্য নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন তৈরি করেছেন, যার ফলে ২০১৫ সালের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে খাদ্যের সংকট নয়, উদ্বৃত্ত থাকছে। খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, খামারি, উদ্যোক্তারাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মাঠ পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কর্মকর্তারা এ কৃতিত্বের দাবিদার। এক সময় আমরা বলতাম খাদ্য ঘাটতি মেটাতে হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন শুধু খাদ্য ঘাটতি নয়, খাদ্যের গুণগত মানের পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি যোগ করেন, খাদ্যের বড় একটি যোগান আসে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম থেকে। মাছ, মাংস ও ডিমে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতাই না বরং উদ্বৃত্ত অবস্থায় এসেছে এবং বিশ্বে রপ্তানি করার মতো পর্যায়ে আমরা পৌঁছেছি। অদূর ভবিষ্যতে দুধ উৎপাদনেও সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি এ খাদ্য উপাদানগুলোর বহুমুখী ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দুধ থেকে কত প্রকার দুধজাতীয় পণ্য তৈরি করা যায়, মাছ থেকে কত প্রকার মাছজাতীয় পণ্য তৈরি করা যায়, মাংস থেকে কত প্রকার মাংসজাতীয় পণ্য তৈরি করা যায় সে প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।
শুধু সরকারি কর্তৃপক্ষের দিকে না তাকিয়ে অনিরাপদ খাদ্য তৈরি ও বিক্রি বন্ধে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বানও জানান মন্ত্রী।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য সততাকে অবলম্বন করতে হবে উল্লেখ করে খাদ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্তদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, মুনাফা একটু কম করেন। খারাপ খাদ্য সরবরাহ করে মানুষকে মৃত্যুর মুখে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো বড় ধরনের অনৈতিকতা ও পাপের কাজ দ্বিতীয়টি নেই। পঁচা, বিষাক্ত ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য খাওয়াবেন না। ভেজালমিশ্রিত খাদ্য খাওয়াবেন না। নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সততা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান।
শ ম রেজাউল করিম আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে যারা খাদ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চেয়েছিল। তাদের এ পরিকল্পনা সফল হয়নি। আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয় উন্নয়নের ম্যাজিশিয়ান, বাংলাদেশকে বলা হয় উন্নয়নের রোলমডেল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশে ও দেশের বাইরে একটি চক্র টাকা বিনিয়োগ করে, লবিস্ট নিয়োগ করে, নিজেদের প্যাডে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশকে যাতে কেউ সাহায্য না করে সে চেষ্টা করছে। এগুলো করে লাভ হবে না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বড় বড় অনেক রাষ্ট্র ছিল, ১৯৭৪ সালে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চেয়েছিল, সফল হয়নি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বিনষ্ট করতে চেয়েছিল, সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে, উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে শকুনি প্রবৃত্তি নিয়ে খামচে ধরার জন্য যারা যখনই আঘাত হেনেছে, তারা পরাজিত হয়েছে।