আমার মতো কেউ যেন প্রতারণার শিকার না হয়। এভাবে কেউ যেন চিকিৎসার অভাবে সন্তানকে না হারায়। যাদের কারণে সন্তানকে হারিয়েছি, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এভাবেই কান্না করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন আয়েশা বেগম। তিনি তার অসুস্থ দুই সন্তানের মধ্যে একজনকে ফিরে পেলেও আরেকজনকে হারান।
সুস্থ হওয়ার পর সোমবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পায় তার ছেলে আব্দুল্লাহ। এরপর তাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে র্যাব। এসময় ওই শিশুকে উপহার দেওয়া হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
কিন্তু যে হাসপাতালের অমানবিক আচরণে আয়েশা বেগম তার অন্য সন্তানকে হারালেন, তিনি তাদের বিচার দাবি করেন।
এই মা জানান, তার যমজ দুই ছেলের ঠান্ডা-জ্বর হয়। ফলে তিনি গত ২ জানুয়ারি সাভার থেকে সন্তানদের নিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে তাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে চিকিৎসকেরা নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তখন সোহরাওয়ার্দীতে এনআইসিইউতে শয্যা খালি ছিল না। এসময় এক দালালের খপ্পরে পড়েন আয়েশা বেগম। সেই দালাল তাদের নিয়ে যান শ্যামলীর ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে’।
সেখানে দুইদিনে আয়েশাকে লাখ টাকা বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বহু কষ্টে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে দেন। এরপর আর টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় রাতেই সন্তানসহ তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
পরে হাসপাতালের বাইরে মৃত্যু হয় শিশু আহমেদুল্লার। এসময় ওই নারী ঢাকা মেডিকেলে ছুটে যান। সেখানে তিনি মৃত শিশুকে এক কোলে এবং অসুস্থ আরেক শিশুকে অন্য কোলে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও র্যাবের নজরে আসে। যা আলোড়ন তোলে দেশব্যাপী।
এরপর র্যাবের সহায়তায় অপর শিশু আব্দুল্লাহকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। সেখানে শেষ পর্যন্ত শিশুটি সুস্থ হয়। শিশুদের বাবা জামাল সৌদি আরব প্রবাসী। সেখানে তিনি দিনমজুরের কাজ করেন।
আয়েশা বেগম বলেন, এক সন্তানকে হারিয়েছে। কিন্তু র্যাবের সহযোগিতায় আজ আরেক সন্তানকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
র্যাব-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. জুলকার নায়েন প্রিন্স বলেন, নির্মম ঘটনাটির খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে র্যাব হাসপাতালে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাঁড়ায়।
এদিকে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক ও পরিচালককে আসামি করে মামলা করেন। মামলার পর র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
এরই ধারাবাহিকতায় ৭ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থেকে ওই হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ারকে গ্রেফতার করে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাসপাতালের মালিক জানান, তার হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালাল নিয়োগ করা আছে।
এছাড়া তিনি দীর্ঘ ২০-২২ বছর ধরে রাজারবাগ, বাসাবো, মুগদা, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায় ছয়টি হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছেন। সেগুলো হলো ঢাকা ট্রমা, বাংলাদেশ ট্রমা হাসপাতাল, মমতাজ মেমোরিয়াল ডায়াগনস্টিক, আরাব ডায়াগনস্টিক, মোহাম্মদিয়া মেডিকেল সার্ভিসেস ও আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল। এর মধ্যে আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল বাদে সবই বন্ধ হয়েছে নানা অনিয়ম ও প্রতারণার কারণে। জানি