বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ইস্যুতে দলটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করেন, মানবিক বিষয়টি নিয়ে ‘আন্দোলনের পথে’ হাঁটছে বিএনপি। আওয়ামী লীগকেও মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে যেন কেউ কোনো ‘অস্থিতিশীল’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে বিষয়েও সতর্ক ক্ষমতাসীন দল।
শুক্রবার বিকেলে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এ সভা হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে এতে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, অসীম কুমার উকিল, আবদুস সোবহান গোলাপ, ওয়াসিকা আয়শা খান, শাম্মী আহমেদ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, বিপ্লব বড়ুয়া, দেলোয়ার হোসেন, ড. সেলিম মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, সায়েম খান, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় রাজধানীসহ সারাদেশে যেকোনো আন্দোলন-কর্মসূচি মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ বিষয়ে জেলা-উপজেলার নেতাদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী সোমবার (২৯ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানো তাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, ‘কেউ যেন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যহত করতে না পারে আমরা সে বিষয়ে সতর্ক থাকবো।’
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা এ বিষয়ে সারাদেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ রাখছেন।
সভা সূত্র জানায়, সভায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ইস্যুটিকে বিএনপি রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক নেতা। তারা বলেন, বিএনপি আন্দোলনের জন্য একটি ইস্যু চাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়াকে প্রাধান্য দিলে বিএনপি আইনি পথে হাঁটতো, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতো। তারা যেহেতু আন্দোলনের পথে হাঁটছে, আওয়ামী লীগকেও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানান, বিএনপি নেতারা যেনো এ ইস্যুতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক অন্দোলনের প্রস্তুতি না নিতে পারে সেজন্য বিএনপি নেতাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার বিষয়েও আলোচনা হয়। এছাড়া চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত যেন তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে না পারে সেদিকও রাখতে বলা হয়।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে বক্তব্য দেন তিনজন নেতা। তাদের ভাষ্য, বেশকিছু জায়গায় অজনপ্রিয় প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছে। ওইসব প্রার্থীকে বিজয়ী করতে গিয়ে দলকে নানা বদনামের ভাগিদার হতে হচ্ছে। আর তৃণমূলে আমাদের সংগঠন ক্ষতিগস্ত হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিৎ।
একই সঙ্গে সভায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়েও আলোচনা হয়। এসময় নেতারা বলেন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করছেন ও যারা তাদের মদদ দিচ্ছেন তাদের গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রথম শোকজ এবং পরে বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। কিন্তু অনেক জায়গায় স্থানীয়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যা তারা করতে পারেন না।
সভায় উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, সভায় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়েও কথা হয়। বিআরটিসির মতো বেসরকারি বাস মালিকদেরও শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধেক ভাড়া নেওয়া উচিত বলে মতামত দেন নেতারা। বাস মালিকদের অর্ধেক ভাড়া আদায়ের আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর আজকের সভার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের বিআরটিসি বাসে ৫০ শতাংশ ভাড়া নির্ধারণ করায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় ধন্যবাদ জানানো হয়। এছাড়া বাস মালিক-শ্রমিকদের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের অর্ধেক ভাড়া রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
অন্যদিকে, সভায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর জানান, সভায় ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের কর্মসূচি নিয়ে আলাপ হয়। তিনি জানান, আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। ওইদিন অনেক কর্মসূচি থাকবে। তাই ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন (ধানমন্ডি ৩২) পর্যন্ত রেলি অনুষ্ঠিত হবে এবং ১০ জানুয়ারি জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় আয়োজন হবে বলে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমতি সাপেক্ষে এ কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে।সুত্র:জানি