বিশ্বনেতাদের কাছে বিশ্বব্যাপী কোভিড টিকাদানের জন্য নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এবং ভবিষ্যতের মহামারি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নীলনকশা প্রণয়নসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেনের ডাকা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য অনাকাঙ্খিত ভ্যাকসিন ব্যবধান দূর করতে অর্থায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভবিষ্যৎ মহামারি প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার জন্য লৈঙ্গিক ও ভৌগলিক ভারসাম্যপূর্ণ একটি নীলনকশা তৈরি করতে নির্বাচিত বিশ্বনেতাদের সমন্বয়ে ডব্লিওএইচও কর্তৃক একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্যানেল আহ্বানের পরামর্শ দেন।
ড. মোমেন জাতীয় পর্যায়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে জোরদার করার প্রশ্নে একটি বিশেষজ্ঞ ওয়ার্কিং গ্রুপ ডেকে নেতৃত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি দক্ষিণে বাংলাদেশের মতো নির্দিষ্ট কিছু দেশে মেধাস্বত্ব অধিকার এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত যথাযথ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ফলপ্রসূ উপায়ে ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান।
পরিশেষে ড. মোমেন মহামারি থেকে উত্তরণে আরও ভাল, পরিবেশবান্ধব ও জোরদার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিতে বিদ্যমান বিষয়গুলোতে পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ করোনায় মৃত্যু হার বৈশ্বিক গড় মৃত্যু হারের চেয়ে কম রাখতে সক্ষম হয়েছে, বর্তমানে দেশে সংক্রমণের হার ১ শতাংশের নিচে রয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু অনুমানের বিপরীতে বাংলাদেশ কক্সবাজারের জনাকীর্ণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার একেবারে ন্যূনতম রাখতে সক্ষম হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন যে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে সব দেশের জন্য সাশ্রয়ী করতে ‘বৈশ্বিক গণপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।
তিনি কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত ও সহায়তা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঢাকা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন উৎপাদনে অবদান রাখতে প্রস্তুত রয়েছে।
ড. মোমেন বর্তমানে ও ভবিষ্যতে এই ধরনের সংকটময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন মহামারিসৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান এবং একটি কোভিড ডেটা ট্র্যাকার চালু করার ঘোষণা দেন।
ব্লিঙ্কেন সেশনে সভাপতিত্ব করেন। এসময় আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউএস এনআইএইচ ডিরেক্টর এবং ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রায় ২৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও ইইউ, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, নরওয়ে, রোমানিয়া, কানাডা, মেক্সিকো, চিলি, পেরু, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল ও কেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।