খেজুর গাছ প্রস্তুতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন দেশের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার গাছিরা। কারণ খেজুরের রস ও পিঠা না হলে শীত জমে না। তাই শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই খেজুরের রস আহরণে গাছ প্রস্তুত করছেন গাছিরা।
শীতের আবহে সবকিছুই যেন বদলাতে শুরু করেছে। এখন থেকেই ব্যস্ততা বেড়েছে চুয়াডাঙ্গার খেজুর গাছিদের। গাছ কাটা ও রস সংগ্রহের তোড়জোর শুরু করেছেন তারা। সকাল হলেই গাছিরা গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচা-ছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন।
কয়েকদিন পরেই গাছে বাঁধানো হবে ভাড়। এরপর রস সংগ্রহ। সেই রস থেকেই খেজুরের গুড় পাটালি তৈরির দৃশ্যও চোখে পড়বে। চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড়ের উৎকৃষ্টমান ও স্বাদ ভিন্ন হওয়ায় এর কদর দেশ বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চুয়াডাঙ্গার গুড় রফতানি হয়ে থাকে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় আড়াই লাখ খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব গাছ থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হবে। এখন গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা।
গাছি সেলিম শেখ বলেন, শীত আসার আগে এই সময় থেকে গাছ পরিচর্যা ও কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি। এরপর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজ শুরু হয় কৃষক রহমত আলী বলেন, প্রতিদিন আমরা ১৫ থেকে ১৬টি গাছ প্রস্তুত করি। একটি গাছ থেকে এক ভাড় রসে এক চুয়াডাঙ্গার কেজি গুড় তৈরি হয়। ১০-১২ ভাড় রস পেলেই ১০ কেজি গুড় উৎপাদন করা যায়। এতে হাজার খানেক টাকা আয় হয়।>সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের কৃষক বিল্লাল আলী বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস ও গুড় আজ বিলুপ্তির পথে। আগের মতো খেজুর গাছ আর নেই। প্রতিদিন ইট ভাটায় জ্বালানির কাজে নিধন হচ্ছে এলাকার শত শত খেজুর গাছ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল মাজেদ বলেন, চুয়াডাঙ্গার গুড়ের স্বাদ যেমন ঠিক তেমনি দেশজুড়ে চাহিদাও অনেক বেশি। এখানকার কৃষকরা ভেজাল গুড় উৎপাদন করে না। গুড়ে ভেজাল মেশানোর অপকারিতাও কৃষকদের মধ্যে অবহিত করা হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর শীতের ছয় মাস প্রায় ২-৩ হাজার পরিবার গুড় উৎপাদনের উপার্জন দিয়ে জীবনযাপন করে।