গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফ্রান্স সফরের সময় ওই দেশের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আগামী নভেম্বর মাসের ৯ তারিখ লন্ডন থেকে প্যারিস যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ফ্রান্স আমাদের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার, উন্নয়ন সহযোগী। বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা রয়েছে ওই দেশটির সঙ্গে। ফ্রান্সের সঙ্গে যে বহুমুখী সহযোগিতা রয়েছে সে তুলনায় রাজনৈতিক যোগাযোগ কিছুটা কম।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বের হয়ে যাওয়ার পরে ফ্রান্সের গুরুত্ব আরও বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বহুপাক্ষিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হলেও ঢাকা ও প্যারিসের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক সাম্প্রতিক সময়ে আর হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সের সঙ্গে সব ধরনের সম্পৃক্ততা বাড়াতে চাই এবং সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সেরও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।’
জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ দমন, উগ্রবাদ মোকাবিলা, সাইবার সিকিউরিটিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, একইভাবে আমরা ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করতে চাই, কারণ প্রযুক্তিগত দিক থেকে তারা অনেক এগিয়ে রয়েছে।’
বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুদেশের বেসরকারি খাত এক্ষেত্রে বড় আকারে কাজ করতে পারে।
বিভিন্ন বৈশ্বিক বিষয়ে দুই পক্ষ এখন আলোচনা করার অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক বিষয়ে ঢাকা ও প্যারিস একসঙ্গে কাজ করেছে এবং করছে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স উভয়ের আগ্রহ রয়েছে। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ারম্যান বাংলাদেশের কাছ থেকে ফ্রান্স এ বিষয়ে জানতে চাইবে বলে তিনি জানান।
জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী বাহিনীর আন্ডার সেক্রেটারি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফরাসি হয়ে থাকে এবং তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার অনেক সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
ফ্রান্সের আগ্রহ
বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হচ্ছে সেটি নিতে ফ্রান্স আগ্রহী বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান।
তিনি বলেন, ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফ্রান্স। দেশটি সমরাস্ত্র তৈরিতে অভিজ্ঞ। বাংলাদেশের যে ডিফেন্স সক্ষমতা এবং ফোর্সেস গোল ২০৩০ ‑ সেখানে প্যারিসের আগ্রহ আছে।
উল্লেখ্য, গত বছর মার্চে কোভিড পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ঠিক আগে ফ্রান্সের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলি ঢাকা সফর করেন এবং সমরাস্ত্র বিক্রয়ের বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জানান।
আফ্রিকার অনেক দেশ আগে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল এবং ওইসব ফ্রেঞ্চ ভাষাভাষীর দেশে প্যারিসের প্রভাব রয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের আরেকটি আগ্রহের জায়গা হচ্ছে আফ্রিকা। কারণ সেখানকার অনেক দেশই আগে ফরাসি উপনিবেশ ছিল।’
বাংলাদেশ আফ্রিকাতে ফুটপ্রিন্ট রাখতে চায় ‑ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে দূতাবাসগুলো রয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই ইংরেজি ভাষাভাষীর দেশে। ফ্রেঞ্চ ভাষাভাষীর দেশগুলোতে আমাদের যোগাযোগ কিছুটা কম।
এছাড়া, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে আমাদের বেশিরভাগই ওই সমস্ত দেশে নিয়োজিত রয়েছে যেগুলোতে ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলা হয়।