রাজবাড়ীর তানিশা ইয়াসমিন চৈতি এখন একজন রূপান্তরিত নারী। জন্মগত ভাবে পুরুষ হিসেবে জন্ম নেন তিনি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন একজন পুরুষ পরিচয়ে।
সার্টিফিকেটে তার সেই নামটিই রয়ে গেছে। এক পর্যায়ে তিনি তার সার্টিফিকেটের নাম পরিবর্তন করতে গেলে ব্যাপক হেনস্থার শিকার হন।এইচএসসির পর আমি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যাই। নোয়াখালি থেকে ঢাকায় আমি ৫০ বার এসেছি। তাদের সব প্রক্রিয়া আমি সঠিক ভাবে ফলো করেছি। কিন্তু তারা আমার সার্টিফিকেট পরিবর্তন করে আমার নতুন পরিচয় করে দেয় নি। বলেছে, এমন সিস্টেম নেই। ফলে আমি আমার অনার্স করতে পারিনি,” বলেন মিজ চৈতি।
বাংলাদেশে সাধারণত একটি শিশু জন্মের পর তার লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে অভিভাবকরা মেয়ে বা ছেলে হিসেবে স্কুলে ভর্তি করিয়ে থাকেন। তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা সামাজিক ট্যাবুর শিকার হন অনেক সময় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।
তবে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বলছে, প্রথমবারের মত এখন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সময় প্রত্যেকে তার নিজের পরিচয় ব্যবহার করে ভর্তি হতে পারবে।
এনসিটিবির অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে এ ব্যাপারে। এছাড়া নতুন শিক্ষাসূচী তৃতীয় লিঙ্গদের নিয়ে বিষদ আকারে বর্ণনা থাকবে।
তিনি বলেন, যে যে পরিচয় দিতে চায় সে পরিচয়ে ভর্তি হবে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যেহেতু তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের আইনি এবং রাষ্ট্রীয় অধিকার দেয়া হয়েছে সেহেতু কোন প্রতিষ্ঠান যেন ভর্তি করা থেকে বিরত না থাকে। এছাড়া সব রকম ফরম ,সেটা ভর্তি ফরম হোক আর যেকোন ফরম হোক, সেখানে নারী-পুরুষের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ এই কথাটা থাকতে হবে। এ মাসের ১৩ তারিখের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন বলে তিনি জানান।
তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, যদি একজন ছেলে হিসেবে শিক্ষা শুরু করে এক পর্যায়ে নিজের পরিচয় নারীতে পরিবর্তন করতে চায় তাহলে সেটার যেন সুব্যবস্থা থাকে।
হিজড়াদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন ‘সম্পর্কের নয়া সেতু’র সভাপতি জয়া শিকদার বলছেন, পুরুষ হিসেবে পড়ালেখা করার কারণে তার সার্টিফিকেট থাকে পুরুষের নামে। পরে রূপান্তরিত হওয়ার পর এই পরিচয় তাকে সব ক্ষেত্রে বেশি ভোগায়।
১৮ বছর বয়সের পর যদি কেউ মনে করে আমার শরীর পুরুষের কিন্তু আমি নারী। সে নারীর পোশাক পরতে পারে, সার্জারির মাধ্যমে নারী থেকে পুরুষ বা পুরুষ থেকে নারী হতে পারে। কিম্বা কিছু নাও করতে পারে।
বিষয়টা তার মনস্তাত্ত্বিক। তখন তার এই রূপান্তরের প্রক্রিয়া যাতে সহজ হয়। যাতে করে তার মেডিকেল কোন পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে না হয়। সরকারি সব ডকুমেন্টে তার পছন্দের পরিচয়টা থাকতে হবে। তাহলে রাষ্ট্রের সব সুযোগ সুবিধা সে ভোগ করতে পারবে,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বলছে, ২০২২ সাল থেকে নতুন শিক্ষা-পদ্ধতিতে তারা পরীক্ষামূলক ভাবে পাঠ্যসূচী চালু করার ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করেছেন।
পরবর্তীকালে এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো যোগ হতে পারে। সরকার ২০১৩ সালে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেয়।
তারা ২০১৯ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র তৃতীয় লিঙ্গে পরিচয় দিতে পারেন, একই সঙ্গে ভোট দেয়ার অধিকার পান। এখন নতুন এই শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথমবারের মত তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করতে পারবে তারা।সুত্র: বিবিসি