ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুমকে সহকর্মীরা শেষ বিদায় জানিয়েছেন। যে বিমানবন্দর থেকে শত শত ফ্লাইটের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সহকর্মীদের কাঁধে কফিনে করে শেষ বিদায় নিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ।
নওশাদের মরদেহ নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি যখন রানওয়ে থেকে বনানীর বাসার উদ্দেশে রওনা হয়, তখন উপস্থিত সহকর্মীদের চোকের জ্বলে ভারি হয়ে ওঠে শাহজালালের বাতাস।
অ্যাম্বুলেন্সের দিকে তাকিয়ে সহকর্মীদের একজন বলছিলেন, গত বৃহস্পতিবার হাসিমুখে গল্প করতে করতে বিদায় জানিয়ে ওমানে যাত্রী নিয়ে রওনা হন ক্যাপ্টেন নওশাদ। মাত্র আটদিনের ব্যবধানে হারিয়ে ফেলা কস্টকর।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল সোয়া ৯টায় ভারতের নাগপুরের হাসপাতাল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি-০২৬) ফ্লাইটে আসে ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ। এরপর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এর আগে কাতারের রাজধানী দোহা থেকে যাত্রী নিয়ে দেশে ফেরার পথে বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের এয়ারক্রাফট (ময়ুরপঙ্খী) ভারতের নাগপুরে থামে। ওই ফ্লাইটটি ক্যাপ্টেনের মরদেহ বাংলাদেশে আনে।সকাল সোয়া ৯টার দিকে এয়ারক্রাফটটি বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে ১৪ নম্বর টারমার্কের সামনে এসে দাঁড়ায়।
নওশাদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘দায়িত্বরত অবস্থায় পাইলট নওশাদের মৃত্যু আমাদের জন্য ‘এক ধরনের অহংকার’। তিনি আকাশে অসুস্থ হওযার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সকলেই উদগ্রীব ছিলেন। প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আমেরিকা বা আরও উন্নত অন্য কোনো হাসপাতালে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাকে কোথাও পাঠানোর মতো অবস্থা ছিল না।’
এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বিমানের এমডি ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালসহ বিমান ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর বিমানবন্দর থেকে মরদেহ বনানীর বাসায় নেয়া হয়। দুপুরে বলাকা ভবনে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে বনানী কবরস্থানে নওশাদকে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার বিমানের বিজি-২২ ফ্লাইটটি ওমান যায়। সেখান থেকে স্থানীয় সময় রাত ২টা ৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসার কথা থাকলেও ঐ ফ্লাইটটি ভোর সাড়ে ৬টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
ঢাকা আসার পথে ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইউম অসুস্থ হয়ে পড়লে ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ করানো হয়।
কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বিমানটিকে নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার সিগন্যাল দিলে কো-পাইলটই বিমানটিকে অবতরণ করান। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের বিমানটিতে ১২৪ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদেই ছিলেন।