দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর কুমিল্লা সাতরা চম্পকনগরের কাউছার হত্যার মুল রহস্য উৎঘাটন করল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা পিবিআইয়ের এসআই গোলাম কিবরিয়া হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী মনির হোসেনকে গত মঙ্গলবার ২৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
ঘাতক মনির হোসেন (৩০) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার পালাসুতা গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে। নিহত আবু কাউছার (২৭) একই উপজেলার কেমতলী গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে।
পিবিআই সূত্র জানা যায়, কুমিল্লা মহানগরীর সাতরা চম্পকনগর এলাকায় মায়ের দোয়া নামে একটি সেলুন পরিচালনা করত মনির হোসেন। দোকানে উর্পাজন কম হওয়ায় ২০১৭ সালে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে মনির নিহত কাউছারের নিকট সেলুনটি বিক্রি করে দেয়। ভাল সেবার মাধ্যমে কাউছার সেলুনটি জনপ্রিয় করে তোলেন। এক বছর পর মনির সেলুনটি কাউছার থেকে পুনরায় নেওয়ার জন্য ভিকটিম কাউছারকে চাপ প্রয়োগ করে ব্যর্থ হয়। মনির দোকানটি নিজের হাতে ভাগিয়ে আনতে নানা পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মনির ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী রাব্বি, শুভ, শান্ত ও ভোলনের সাথে কাউছারকে মারধর করে দোকান থেকে বের করে দেওয়ার চুক্তি করে ।
চুক্তি অনুযায়ি ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল রাতে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা সেলুনে প্রবেশ করে কাউছারের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে । একপর্যায়ে সন্ত্রাসী শুভ কাউছারের বুকে ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে লাশ ফেলে ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মনির পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশ সেলুনের ভেতর থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ।এ ঘটনায় নিহতের ভাই আবুল কালাম বাদী হয়ে ২ এপ্রিল কোতোয়ালি মডেল থানায় ৪ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যা মামলাটি এক বছরের অধিক সময় তদন্ত করে চার নম্বর আসামি মো মনির হোসেন হত্যার ঘটনায় কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা না পেয়ে এবং তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় মনিরকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি মনির হোসেনকে মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় বাদী আদালতে নারাজি দেয়। নারাজির প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই কুমিল্লাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
কুমিল্লা পিবিআইয়ের এসআই গোলাম কিবরীয়াকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় । তিনি তদন্ত করে চার নম্বর আসামি মনির হোসেন হত্যায় সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েতোকে গ্রেফতার করে।২৫ আগস্ট বিকালে কুমিল্লার বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামি মনির হোসেন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই গোলাম কিবরিয়া বলেন, আসামিকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়ায় বাদী সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে নারাজি পিটিশন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে মামলাটি গুরত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করি। তদন্ত করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মনির হোসেনের পরিকল্পনার সূত্র খুঁজে পাই। পরে তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার পরিকল্পনামতে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে বলে সে স্বীকার করে।