১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যার পর দেশের স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে খন্দকার মোশতাক। আর তাকে পেছন থেকে শক্তি জুগিয়েছেন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার না করে বরং বর্বর খুনিদের রক্ষার জন্য সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে মোশতাক যা প্রথমে ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০ নামে অভিহিত ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে নাটকীয় ভোটের মাধ্যমে নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণার পর এই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে জেনারেল জিয়াউর রহমান।
সাজানো সংসদে এটিকে অনুমোদন করায় সে। শুধু বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের সুরক্ষা দিতেই ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর ব্যবস্থা করে জিয়াউর রহমান।
শুধু তাই নয়, এর আগে সেনাপ্রধান তথা সামরিক অবস্থার মধ্যে ডিফ্যাক্টো রাষ্ট্রপ্রধান থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপদে বিদেশযাপনের ব্যাবস্থাও করেন জিয়াউর রহমান।
এরপর রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মোটা বেতনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন জিয়াউর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর যে ১২ খুনিকে বিদেশে চাকরি দিয়ে জিয়াউর রহমান পুরস্কৃত করেছিল, তারা হলেন-
১. লে. কর্নেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব,
২. লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব,
৩. মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব,
৪. মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব,
৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব,
৬. মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব,
৭. মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব,
৮. মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব,
৯. কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব,
১০. লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব,
১১. লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব,
১২. লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার অন্যতম দুই ক্রীড়নক মেজর ফারুক ও রশিদকে লিবিয়ায় থেকে বিলাসবহুল জীবনযাপনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছিল অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা লিবিয়ায় বসে বাংলাদেশে একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে।
উল্লেখ্য যে, ফারুক-রশিদ দুজন সম্পর্কে ভায়রা ভাই। আবার রশিদ সম্পর্কে খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা। দুজনই আবার জিয়াউর রহমানের খুবই আস্থাভাজন কর্মকর্তা। তারা দুজনই পরবর্তীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে একাধিকবার জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করা কথা এবং অভ্যুত্থানের ব্যাপারে জিয়াউর রহমানের অনুমতি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।