সফল হতে চাইলে চাই নিজের ইচ্ছা শক্তি ! দ্বিতীয়ত মহান আল্লাহ যে কোন উছিলায় তা পরিপূর্ণ করে দেন।তারই বাস্তব উদাহরণ- ফিলিস্তিনির যুবক ফরিদ আবদুল আলী:
ফিলিস্তিনির একজন চিকিৎসক ড. মুহাম্মদ খানী বলেন, একদা আমি আমার গাড়িতে বসা ছিলাম, হঠাৎ প্রায় ১৬ বছর বয়সের এক তরুণ বালক এসে আমাকে বলল, স্যার আমি কি আপনার গাড়ির সামনের গ্লাসগুলো পরিস্কার করে দিতে পারি? আমি বললাম হ্যা।
বালকটি যত্নসহকারে গ্লাস পরিস্কার করে দেয়। আমি তার হাতে ২০ ডলার গুজে দিলাম। ছেলেটি কিছুটা অবাক হয়ে বলল, আপনি কি আমেরিকায় থাকেন? আমি বললাম হ্যা। কেন? সে বলল, আমি কি এই ২০ ডলারের পরিবর্তে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে কিছু কথা জানতে পারি?
আমি তার বিনয় ও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে কাছে ডেকে নিয়ে আলাপ শুরু করে দিলাম। আলাপের শেষ দিকে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি এভাবে রাস্তায় গাড়ি পরিস্কারের কাজ করে বেড়াচ্ছ কেন তুমি তো একজন মেধাবী ছাত্র?
উত্তরে সে বলল, আমার দু বছর বয়সেই আমার আব্বু মারা যান। আমার মা মানুষের বাড়িতে বুয়ার কাজ করে। আমি এবং আমার ছোট বোন বাইরে টুকটাক কাজ করে বেড়াই বাড়তি কিছু রোজগারের আশায় যা দিয়ে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চলে। আমি শুনেছি আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নাকি মেধাবী ছাত্রদের উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য স্কলারশিপ দেয়। আমার খুব ইচ্ছা সেখানে পড়ার। কিন্তু সেখানে আমাকে সাহায্য করার মত তো কেউ নেই।
আমি বললাম চল আগে আমরা একসাথে ডিনার করি। সে বলল একটি শর্তে কবুল করতে পারি। আর তা হল বিনিময়ে আমি আপনার গাড়ির পেছনের গ্লাসগুলোও পরিস্কার করে দেব।
আমি কথা না বাড়িয়ে তা মেনে নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম।খাবার অর্ডার করলে সে ওয়েটারকে বলল তারগুলো পার্সেল করে দিতে। সে বাসায় গিয়ে তার মা আর বোনকে নিয়ে খাবে। খেয়াল করলাম তার ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অসামান্য।
বিদায় বেলায় সিদ্ধান্ত হল সে তার কাগজপত্রগুলো আমাকে দিবে, আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করব। এভাবে দীর্ঘ ছয়মাস পর আমি তাকে আমেরিকা এনে ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে সক্ষম হলাম। সে তার তার মেধা ও অধ্যাবসায়ের জোরে কয়েক বছরের মধ্যেই আধুনিক টেকনোলজির কনিষ্ঠ টেক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নিউইয়র্ক টাইমসের পাতায় তাকে নিয়ে লিড নিউজ হলে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়।
তার ঈর্ষনীয় সফলতায় আমি ও আমার পরিবার যারপরনাই আনন্দিত হই। এদিকে তাকে না জানিয়ে তার মা ও বোনের ভিসা ব্যবস্থা করে আচমকা তার সামনে আমেরিকায় নিয়ে এসে তাকে বড়সড় সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দেই। তাদের দেখে সে বোবা বনে যায়। এমনকি কাদতে পর্যন্ত ভুলে যায়। এখন সে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষকদের একজন।
তারও কিছুদিন পর আমি একদিন বাসা থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। দেখি সে বাইরে দাঁড়িয়ে আমার গাড়ির গ্লাসগুলো পরিস্কার করছে! দ্রুত দৌড় দিয়ে তাকে বাধা দিয়ে বলি এগুলো কি করছো?
সে অশ্রুসজল চোখে বলল, ছাড়ুন স্যার! আমাকে আমার কাজ করতে দিন। যেন আমি আমার পরিচয় ভুলে না যাই। আমি মনে রাখতে চাই আমি কি ছিলাম আর আজ কি হলাম। এবং আপনি আমার জন্য কী করেছেন।
এই সেই ফিলিস্তিনি যুবক ফরিদ আব্দুল আলী। যিনি বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিদ্ধ তরুণ প্রফেসর।