জটিলতায় আটকে গেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের প্রণোদনার টাকা (সম্মানী)। ৩১৮ জন চিকিৎসকের নামে বরাদ্দ এলেও ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা সব চিকিৎসকের নামে বরাদ্দ না আসার ‘অজুহাতে’ মিলছে না ভাতার টাকা। অথচ একই হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করা নার্সরা ঈদুল আজহার আগেই টাকা পেয়েছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডিসহ বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানুয়ারি থেকে প্রণোদনার টাকা পেতে শুরু করেন। সম্মানী হিসেবে দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা দেওয়া হয় সবাইকে।
চমেক হাসপাতালের ২৯৫ জন নার্স গত মাসে ঈদুল আজহার আগে এই টাকা পেয়েছেন। তবে কয়েকজনের নাম বাদ পড়েছে বলে চমেক হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক ইনশেনিয়াত হান্না জানান। তিনি বলেন, কয়েকজন বাদ পড়েছেন। পাশাপাশি আরও কয়েকজন নতুন করে করোনা ওয়ার্ডে কাজ করছেন। সব মিলিয়ে ২০-২৫ জনের নাম যখন নতুন করে চাওয়া হবে, তখন দেওয়া হবে।
একই হাসপাতালের ৩১৮ জন চিকিৎসক ও ৪৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীর নামে ১৩ জুন প্রণোদনার টাকা বাবদ ২ কোটি ৮২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবু ইউছুফ স্বাক্ষরিত বরাদ্দপত্রে বলা হয়, সম্মানী প্রদানের বিস্তারিত বিবরণী চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে হবে।
কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনো ওই টাকা বিতরণই করেনি। কর্তৃপক্ষের দাবি, আরও দুই শতাধিক চিকিৎসকের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। ফলে তাঁদের টাকা আসেনি। এর মধ্যে ১৩৪ জন হচ্ছেন মেডিকেল কলেজের অধীনে বিভিন্ন কোর্সে অধ্যয়নরত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী। এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগের আরও কিছু চিকিৎসকের নাম বাদ পড়েছে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু চিকিৎসকের নামে সম্মানী এসেছে। কিন্তু আরও অনেকের
নাম বাদ পড়েছে। আমরা নামগুলো সংগ্রহ করে পাঠাচ্ছি। তাঁদেরটা এলে সব একসঙ্গে বিতরণ করা
জানা গেছে, করোনা চিকিৎসায় যুক্ত হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের নাম হাসপাতালের পরিচালক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাতে চমেকের অধীনে কোর্সের শিক্ষার্থীদের নাম ছিল না। চমেক অধ্যক্ষের কার্যালয়ও তাঁদের নাম পাঠায়নি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রণোদনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেবা বিভাগ থেকে হলেও শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে হওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। শিক্ষক ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীসহ প্রায় আড়াই শ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাঁদের নাম আমরা নতুন করে পাঠাচ্ছি। তাঁরাও করোনায় দায়িত্ব পালন করেছেন।’
চমেক হাসপাতালে শুরুতে ১০০ শয্যার করোনা বিভাগ চালু করা হয়। তা এখন ৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা সার্বক্ষণিক সেবার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কোর্সের শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে দায়িত্ব পালন করতেন। এ কারণে বরাদ্দ হওয়ার পরও টাকা বিতরণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক চিকিৎসক।
নাম প্রকাশ না করে তাঁরা বলেন, বাদ পড়াদের নাম নতুন করে পাঠানো হোক। কিন্তু যাঁদের নামে এসেছে, তাঁদের দিয়ে দেওয়া উচিত। এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা ওয়ার্ডে কর্তব্য পালন করছেন তাঁরা, অনেককে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তবু ভাতা দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে।