করোনা সংক্রমণ রোধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত তিন মাস তিন দিনে চিকিৎসা শেষে ভারত থেকে ফিরেছে ৭ হাজার ৪১ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী। তবে অর্থকষ্টে ভালো নেই চিকিৎসা শেষে ভারত থেকে ফিরে আসা পাসপোর্ট যাত্রীরা।
দেশের স্বার্থে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে মত পোষণ করলেও নানা দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের দিন কাটছে বদ্ধ হোটেলে। গত বছর সরকারি খরচে কোয়ারেন্টাইন পরিচালনা হলেও এ বছর ফেরত আসা যাত্রীদের নিজ খরচে ১৪ দিন হোটেলে অবস্থান করতে হচ্ছে। এতে এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।
তবে কোয়ারেন্টাইন তত্ত্বাবধায়নে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন খরচ কমাতে হোটেল ভাড়া, যানবাহন খরচ কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে সরকার গত ২৩ এপ্রিল থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত ফেরত পাসপোর্টধারী যাত্রীদেরকে বাধ্যতামূলক ব্যক্তিগত খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রম শুরু করে। ফলে ভারত ফেরত যাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে নিজ খরচে বেনাপোল, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন থাকতে হচ্ছে। এদের মধ্যে অসহায় যাত্রীদের রাখা হচ্ছে যশোরে গাজীর দরগা নামে একটি মাদ্রাসায়।
তবে এ বছর হোটেল ভাড়া, খাওয়া ও পরিবহন খরচ সব যাত্রীদের বহন করতে হলেও গত বছর ভারত ফেরত কোয়ারেন্টাইনে থাকা সব যাত্রীদের সব ধরনের খরচ সরকার বহন করেছিল। ভারত ফেরত পাসপোর্টধারী যাত্রীদের আরটিপিসিআরের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেও তাদের বাংলাদেশে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন করতে হচ্ছে। তবে যারা ভারতে প্রবেশ করছে তাদের আরটিপিসিআরের সনদ থাকলে ভারত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে নিজ গন্তব্যে যেতে পারছেন। সেখানে কোয়ারেন্টাইন নিয়ম প্রথম থেকেই নেই।
বেনাপোল সিটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা পাসপোর্টধারী যাত্রী শ্রী হারান চন্দ্র ধর জানান, তার স্ত্রী জটিল রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনেক কষ্টে তিনি স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতে তিনি মারা যান। স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে জমানো অর্থ সব খরচ হয়ে গেছে। তার মরদেহ দেশে আনার মতো খরচ তার পক্ষে বহন করা কষ্টকর ছিল। অবশেষে ভারতীয় দূতাবাসে আবেদন জানিয়ে স্ত্রীর সৎকাজ ভারতেই সেরে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে তাকে কোয়ারেন্টাইনে মানতে আবাসিক হোটেলে থাকতে হচ্ছে ১৪ দিন ধরে। মেয়ে-জামাই যদি খরচ না দিত তাহলে তার কষ্টের শেষ থাকতো না, দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে চৌধুরী আবাসিক হোটেলে থাকা ভারত ফেরত চাঁদপুরের পাসপোর্ট যাত্রী মৃত্যুঞ্জয় ও গোপাল গঞ্জের কৃপাসিন্ধু রায় বলেন, তারা দেশের স্বার্থে কোয়ারেন্টাইন নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। চিকিৎসা শেষে ভারত থেকে ফিরে হাতে আর খরচের টাকা থাকে না। ‘এরপর আবার ১৪ দিন হোটেলে থাকতে-খেতে কেমন বেকায়দায় পড়তে হয় বুঝতেই পারছেন। এক্ষেত্রে সরকার যদি কিছু খরচ বহন করতো তবে আমরা অসহায় হয়ে পড়া মানুষগুলো কিছুটা হলেও কষ্ট লাঘব হতো।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব জানান, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে বাধ্যতামূলক ভারত ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন শুরু হয়েছে। গত ১০০ দিনে ভারত থেকে ফিরছে ৭ হাজার ৪১ জন। বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিন রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার যাত্রীরা ভারত থেকে ফিরতে পারবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র থাকলে প্রতিদিন যাওয়া যাবে ভারতে। ভারত থেকে ফিরতে প্রয়োজন হচ্ছে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের ছাড়পত্র ও আরটিপিসিআর ভিত্তিক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করা করোনা নেগেটিভ সনদ। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ও আরটিপিসিআর ভিত্তিক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করা করোনা নেগেটিভ সনদ লাগছে বলেও জানান ওসি।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলীফ রেজা জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভারত ফেরত যাত্রীদের নিজ খরচে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। তবে যাত্রীদের খরচ সাশ্রয়ে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে যাত্রীদের হোটেল ভাড়া আগের চেয়ে অর্ধেক এবং যানবাহন ভাড়া নিদিষ্ট হারে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনে শেষে কারো যদি বাড়ি ফেরার অর্থ না থাকে বা খাদ্যে কষ্টে ভোগে আবেদন করলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন দেখবে। জটিল রোগে আক্রান্তদের। সুবিধার্থে হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবাসিক হোটেলে নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত আছে বলে জানান তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..