ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, খাট, এলএসডির পর নতুন আরেকটি মাদকের সন্ধান পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। নতুন এ মাদক হলো ম্যাজিক মাশরুম। বিভিন্ন খাবারে কেক ও চকলেট মিশ্রিত অবস্থায় সেবন করা হয় এটি। এ মাদক সেবনের ফলে সেবনকারীর মধ্যে হ্যালোসিনেশন তৈরি হয়। তবে ইতোমধ্যে হাতিরঝিল এলাকা থেকে ম্যাজিক মাশরুম ও বিদেশি মদসহ দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা দু’জনই ওই মাদক কারবারের সাথে জড়িত।
র্যাব বলছে, পাউডার, ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায় এ মাদক। এটি ব্যবহারের পর সেবনকারীর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এটি সেবনের পর ছাদ থেকে লাফিয়েও পড়তে পারেন কেউ। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া যুবকদের মধ্যে কয়েকজন দেশে এ মাদক নিয়ে আসছেন।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর একটি বিশেষ দল হাতিরঝিল এলাকা থেকে দুই যুবককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নাগিব হাসান অর্ণব ও তাইফুর রশিদ জাহিদ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মাদক ম্যাজিক মাশরুমের ৫টি বার। প্রত্যেক বারে রয়েছে ২৪টা করে সøাইড। প্রতিটি বারে ম্যাজিক মাশরুমের পরিমাণ ২৫০০ মিলিগ্রাম।
কমান্ডার মঈন বলেন, নাগিব হাসান অর্ণব বাংলাদেশে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তাইফুর রশিদ জাহিদ তার সহপাঠী ছিলেন। অর্ণব ২০১৪ সালে লেখাপড়া করতে কানাডায় যান। লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই কাজ শুরেু করেন তিনি। তাইফুর রশিদ জাহিদ গাঁজা ও মদ্যপানে আসক্ত ছিলেন। ২০১৯ সালে এলএসডি, ডিএমটিসহ বিভিন্ন ধরনের সাইকেডেলিক ড্রাগ নিয়মিত সেবন ও বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। সাইকেডেলিক ড্রাগ সম্পর্কে তার আগ্রহ সৃষ্টি হলে ইন্টারনেটে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন তিনি।
এরপর জাহিদ বাংলাদেশে জন্মানো বিভিন্ন মাশরুমের মধ্যে সাইকেডেলিক বা ম্যাজিক মাশরুম আছে কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। ডার্ক সাইটে ম্যাজিক মাশরুমের খোঁজ পান তিনি। এরপর বিদেশে অবস্থানরত তার বন্ধু ও পরিচিতদের ম্যাজিক মাশরুম বাংলাদেশে নিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি। জাহিদের এমন একটি প্রস্তাবে রাজি হন কানাডায় অবস্থানরত অর্ণব। চলতি বছরের মে মাসে ম্যাজিক মাশরুমের বড় একটি চালান নিয়ে বাংলাদেশে আসেন অর্ণব।
এ মাদককে বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে কমান্ডার মঈন জানান, এটি সেবন করার পর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাহিষ অত্যন্ত বীভৎসভাবে নিজেই নিজের হাতের বিভিন্ন অংশ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলেন। তিনি আরও জানান, এই মাদক সেবনে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, থাকে আট থেকে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত।
কীভাবে এই মাদকের পেমেন্ট ও আমদানি হচ্ছে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, প্রত্যেকটি বারে থাকে ২৪টি করে সøাইড। একেকটি বার বাংলাদেশে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। বিট কয়েন, পেপলসহ অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে এ মাদক বেচাকেনা হয়। কখনো কারবারি নিজেই চকলেটের আড়ালে এই ম্যাজিক মাশরুম দেশে আনছেন। আবার কখনো যাত্রীর লাগেজের মাধ্যমেও এই মাদক দেশে আমদানি করা হচ্ছে। নতুন এই মাদকের দাম দেশে বেশি, কিন্তু বিদেশে কম। এর আমদানিতে খরচও কম। আর এটি বিক্রি লাভজনক। এসব কারণে এ মাদকের ব্যবহার বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যুর পর আলোচনায় আসে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড (এলএসডি) নামে নতুন ধরনের এক মাদক। এলএসডি সেবনের কারণে স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনা হারিয়ে হাফিজুর আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এলএসডির ক্রেতা-বিক্রেতা।