উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র,ধরলা, দুধকুমারের পানি অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এই নদ-নদী সমূহের অববাহিকায় বিভিন্ন পয়েন্টে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে ডুবে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এরই মধ্যে জেলার চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বেড়ে নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলের বসতবাড়ি ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট,আবাদি জমিসহ ধান ও পাটের ক্ষেত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় মহানন্দার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর,কৃষিজমিসহ নানা স্থাপনা।
কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ সবকটি নদ-নদীর পানি আবার বাড়ছে। তবে তা বিপত্সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড এই তথ্য জানিয়েছে। পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে দৌলতদিয়ার ৩ ও ৭নং ফেরিঘাটের র্যাম ডুবে গেছে। এতে ওই ঘাট দুটি দিয়ে যানবাহন পারাপার বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে বলে ফেরি মাস্টাররা জানান।
গোয়ালন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার ইদ্রিস আলী মোল্লা জানান,পদ্মা নদীতে হঠাত্ করে প্রচুর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ সোমবার এ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল মাত্র ১ সেন্টিমিটার। বর্তমানে পানির লেভেল ৭ দশমিক ৯০ মিটার। এখানে বিপদসীমার লেভেল ৮ দশমিক ৬৫ মিটার।
যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর পয়েন্টেও যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাউবো সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ১০-১২ জুলাই পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকবে। এরপর আবার কমতে থাকবে। এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের দুই কোটি টাকার রাউতারা স্লুুইচ গেট সংলগ্ন অস্থায়ী রিং বাঁধটি কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফলে সিরাজগঞ্জসহ তিন জেলার চলনবিল অঞ্চলের অন্তত নয় উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে এসব এলাকার প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে লাগানো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, সমপ্রতি বাঁধটি কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয় মত্স্যজীবী ও বালু ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে এই কাজটি করেছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র তাদের বুলেটিনে জানিয়েছে,সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত বাড়ায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার নাগাদ দ্রুত বাড়তে পারে তিস্তা-ধরলা-দুধকুমারের পানি। ফলে নদী অববাহিকার বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হওয়া বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর তিনটের দিকে ধরলা নদীর পানি সকাল থেকে ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে ও উজানের ঢলে জেলার নদী তীরবর্তী প্রায় অর্ধ-শতাধিক চরে ও দ্বীপচরে পানি উঠে। অনেকের ঘরে পানি উঠায় তার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেয়। ওইসব এলাকায় রাস্তা ঘাট ও গ্রামীণ সড়কগুলোর কয়েক জায়গায় ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানি কমা-বাড়ার কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন চলছে। জেলার ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমোর নদের ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে ৮টি প্রাথমিক বিদ?্যালয়সহ ৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।