মহামারী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান সপ্তাহব্যাপী চলমান কঠোর লকডাউনেে ঘরে থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে।
শনিবার (৩ জুলাই) দুপুরে একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান। সকাল ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ঈদুল ফিতরে বার বার অনুরোধ করলাম, আপনারা আপনাদের জায়গা ছেড়ে যাবেন না। কিন্তু, অনেকেই তো সে কথা শোনেননি। সকলেই ছুটে চলে গেছেন গ্রামের বাড়ি। তার ফলাফলটা কী হলো? পুরো বর্ডার এলাকার বিভিন্ন জেলায় করোনাটা ছড়িয়ে পড়ল। সকলে যদি আমাদের কথা শুনত, তাহলে হয়তো আজকে এমনভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ত না।’
প
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে। শুধু সরকার না, আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে প্রণোদনা দিয়েছি বিভিন্ন খাতে। আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। এমন কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ নেই, যাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি। যেহেতু আবার করোনা দেখা দিয়েছে, আমাদের সাধ্যমতো আবার সহায়তা দেব। কারো খাদ্যপ্রাপ্তিতে যাতে অসুবিধা না হয়, অবশ্যই সে বিষয়টা আমরা দেখব।প্রয়োজনে ঘরে ঘরে খাবার পাঠানো হবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। আপনাদের প্রতি আহ্বান, অন্তত নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন। নিজে সুরক্ষিত থাকুন, অন্যকে সুরক্ষিত রাখুন। সবাই এটা মেনে চললে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’
‘স্কুল খুলে ছেলেমেয়েদের কী মৃত্যুর মুখে দেব?’
স্কুল খোলার দাবি করে দেশের ছেলেমেয়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কিনা সংসদ সদস্যদের তা বিবেচনা করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সর্বস্তরে শিক্ষা বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। করোনাকালে স্কুল শুরু করার জন্য বাজেটে টাকা রেখেছি। শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস, জুতা, ব্যাগ কেনা ও স্কুল ফিডিংয়ের জন্য বরাদ্দ আছে। স্কুল বন্ধ আছে কিন্তু পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য সংসদ টিভি চালু আছে। আমরা রেডিও উন্মুক্ত করে দিয়েছি। রেডিওর মাধ্যমে পাঠ চলছে। যেভাবে সম্ভব পড়াশোনার কাজটি চালিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্কুল বন্ধ, এজন্য একটু ক্ষতি হচ্ছে। টিকা দেওয়ার পরে সব স্কুল খুলে দেওয়া হবে। এখন তো শিশুদেরও করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। লেখাপড়ার জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কিনা তা একটু বিবেচনা করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে আমরা দেখেছি সবই অনলাইন। একটু খুলল আবার মহামারি ছড়িয়ে পড়ল, সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ। আবার ঘরে বসে কাটাচ্ছে। হ্যাঁ, তারা অপশনও দিচ্ছে। যারা ঘরে বসে পড়বে তারা পড়ছে। যারা স্কুলে যেতে চায় তারা যাচ্ছে। আবার যখন করোনা বেশি ছড়ায় সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করছে। শুধু বাংলাদেশ কেন এখন সারাবিশ্বে এ অবস্থা। সেটা সবাইকে ভাবতে হবে।
বিএনপির তীব্র সমালোচনা :প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মানে বাংলাদেশ না, পাকিস্তান হ্যাঁ। এইতো বিএনপি? এই হলো তাদের রাজনীতি। এই হলো তাদের গণতন্ত্র। জিয়াউর রহমান দেশে কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছিলেন।
সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি এমন একটি দল যে দল সৃষ্টি করেছেন একজন সামরিক জান্তা। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার যে পরিকল্পনা হয় তার মূল শক্তি ছিল জিয়াউর রহমান। খুনি কর্নেল রশিদ এবং ফারুক বিবিসির ইন্টারভিউতে এটি স্পষ্ট করেছে। জিয়াউর রহমান তাদের সঙ্গে না থাকলে কোনোদিনও এই ষড়যন্ত্র করতে পারত না। কারণ জিয়াউর রহমান ছিলেন উপ-সেনাপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পর বেগম জিয়াকে ঘরে নিতে চাননি। কারণ, তার আরেকটি ঘটনা আছে সেটা আমি জানি। ওই সময় জিয়াউর রহমান ছিলেন কুমিল্লায়। তখন তাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং উপ-সেনাপ্রধান করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাকে উপ-সেনাপ্রধান করেন। ওই সময় তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর থেকে মেজর জেনারেল করেন বঙ্গবন্ধু। সেই জিয়াই ষড়যন্ত্র করে মোশতাক, কর্নেল রশিদ-ফারুককে নিয়ে। মোশতাক যখন অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন জিয়াউর রহমানকে করেন সেনাপ্রধান। সেই মোশতাককে হটিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন। জিয়া ছিলেন একদিকে সেনাপ্রধান, আরেকদিকে ছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি। এর আগে আইয়ুব খান এই একই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিলেন।
বিএনপি গঠনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আবার রাজনীতিবিদ হন। উর্দি পরে ক্ষমতায় এসে পরে রাজনীতিতে নাম লেখান। সেখান থেকে পরে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। সেই দলই হলো বিএনপি। এই হলো তাদের রাজনীতি, এই হলো তাদের গণতন্ত্র। ‘৭৫ থেকে ‘৮১ সাল পর্যন্ত কারফিউ দিয়েছিল বিএনপি। জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন কারফিউ গণতন্ত্র। জিয়াউর রহমান অনেক দল গঠনের সুযোগ দিয়েছেন এটা ঠিক, কিন্তু সেখানে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ ছিল না। আর নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকেই নির্দিষ্ট থাকতো। ‘৭৮ সালে হ্যাঁ-না ভোট, ‘৭৯ সালে সংসদ নির্বাচন সবই ছিল খেলা।’