মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় রাজনীতিতে যুক্ত করা ও সহিংসতায় ব্যবহারের অভিযোগের পর কওমি মাদ্রাসাসহ দেশের সব ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ প্রস্তুত করছে সরকার। কওমি, নুরানী, দীনিয়া, ফোরকানিয়া ও ইবতেদায়িসহ সকল ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
কওমিসহ দেশের ধর্মীয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে খসড়া নীতিমালা তৈরি করতে এর আগে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। গত ২১ জুন ১৫ সদস্যের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান গণমাধ্যম বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। সম্প্রতি আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। বিষয়গুলো পর্যালোচনা হচ্ছে।
কওমি মাদ্রাসার যে নেতারা আছেন তাদের সঙ্গে আন-অফিসিয়ালি কথা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তো শিক্ষার মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হবে। কেউ তো দেশের বাইরের লোক নয়, সবাই বাংলাদেশেরই লোক। এগুলো (সহিংসতা) যেনও না হয় সে চেষ্টা আমরা করছি। কেউ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করুক আমরা তা চাই না। সঠিক ধারায় ও কর্মমুখী শিক্ষায় তারা যেন ফিরে আসে।
চলতি বছর নারায়ণগঞ্জের রিসোর্টকাণ্ডের পর গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর সহিংসতার ঘটনায় দেশব্যাপী হেফাজতের শতাধিক নেতাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজত কাণ্ডের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধী আন্দোলন এবং চলতি বছর মামুনুলকে গ্রেফতারের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে সহিংসতা চালানো হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গত ২৪ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, হেফাজতের মধ্যে অনেক নেতা উগ্রবাদী মানসিকতা নিয়ে নাশকতায় জড়িত। সারাদেশে ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণের জন্য রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন নামক একটি সংগঠন তৈরি করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছিলেন, এতিম অসহায় মাদ্রাসা ছাত্রদের দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ ও বাড়ি-গাড়ি করেছেন হেফাজত নেতারা। মাদ্রাসা দখলের মতো অপকর্ম এবং অনেকে নারী বিলাসের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। হেফাজত ক্ষমতায় যাবার জন্য অপচেষ্টায় নাশকতা করছে বলেও জানিয়েছিলেন এই কর্মকর্তা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মোদিবিরোধী সহিংসতার ঘটনার পর গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কওমিসহ সব ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত ২৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কাছে কওমি, নুরানী, দীনিয়া, ফোরকানিয়া ও ইবতেদায়িসহ সকল ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর ডাটাবেজ প্রস্তুত করার অনুরোধ জানায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২১ জুন শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) মহাপরিচালককে এই নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। শিক্ষা সেক্টরের জাতীয় ডাটা ওয়ারহাউজে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি নিয়মিত হালনাগাদ সম্পন্ন করতে হবে বলে ওই নির্দেশনায় বলা হয়।