প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার সেকেন্ড ওয়েভে সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এই রোগের বিস্তার মোকাবেলায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি দেশের ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের রপ্তানী খাতকে সমৃদ্ধ করণে সংশ্লিষ্ট মহলকে গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই অবস্থা (করোনা) আমরা মোকাবেলা করতে পারবো। ইনশাল্লাহ সে বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণকালে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হওয়ায় সকলকে সতর্ক থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরনে তার আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, আবার যেহেতু মানুষ ব্যাপকভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাই, সবাই একটু সাবধানে থাকবেন। নিজেকে এবং পরিবারকে নিরাপদে রাখবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নিজেকে এবং অপরকে সুরক্ষিত রাখবেন-সেটা আমার অনুরোধ।
সরকার সারাদেশে একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই কৃষি পণ্য বা খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে। কেননা এই করোনা কালে আমরা যদি উৎপান অব্যাহত রাখতে পারি তাহলে নিজেদের চাহিদা যেমন মেটাতে পারবো তেমনি অন্যকেও সহযোগিতা করতে পারবো। আর রপ্তানির ক্ষেত্রেও আমাদের পণ্য বৃদ্ধি করতে পারবো।
তিনি বলেন, ফল-মূল, শাক-সবজী, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সবকিছুই আমরা উৎপাদন বাড়িয়ে এটাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে সেগুলো আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। কাজেই প্রক্রিয়াজাতকে আমরাদের গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এই একশ’টি বিশেষ অঞ্চলে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি সেখানে যেন কৃষি প্রক্রিয়াজতকরণ শিল্প গড়ে ওঠে, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে ওঠে। যা আমরা বিদেশেও রপ্তানী করতে পারবো।
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করার বিশেষ অনুরোধও জানান। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নয় এগিয়ে যাবে, এমনই দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা পুণর্ব্যক্ত করে বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় থাকতে পারায় আমরা হাতে সময় পাওয়ায় গবেষণায় যেমন উন্নতি করেছে তেমনি দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পেরেছি, কেননা জাতির পিতা আমাদেরকে এই স্বাধীন দেশ এনে দেওয়ার সময় এদেশের দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সে চেষ্টা সরকার অব্যাহত রেখেছে।
কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম স্বাগত ভাষণ দেন এবং পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। এছাড়া পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন মায়া রানী বাউল।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার ১৪২৪’ প্রদান করেন। যারমধ্যে রয়েছে ৫টি স্বর্ণ পদক, ৯টি রৌপ্য পদক এবং ১৮টি ব্রঞ্জ পদক। কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ৩২ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মাঝে এই পদক বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রণালয়ের কার্যাবলী সম্পর্কিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারী পরিবেশিত হয় এবং প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বাণী নিয়ে ‘বাণী চির সবুজ’ এবং ‘চিরঞ্জীব’ নামে দুটি স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের দেশ পরিচালনায় বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে থাকলেও বর্তমান সময়ে করোনা কেবল দেশেই নয় সমগ্র বিশ^ব্যাপী একটি স্থবিরতা নিয়ে এসেছে, যেখানে ঘন বসতির দেশ হওয়ায় বাংলাদেশও ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা কালীন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারা দেশে ৭২৭টি স্থানে ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে চাল-আটা এবং টিসিবি-এর মাধ্যমে নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি, এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর জীবন দেয়ার মানসে শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন বলেন, উঁচু এলাকায় বীজতলা করে ফসলের চারা তৈরী করে এয়ার ফোর্সের হেলিকপ্টারের সহায়তায় দুর্গম এলাকার কৃষকদের মাঝে সময়মতো পৌঁছে দিতে পারার কারণে সেবারই বাংলাদেশ প্রথম খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।
প্রধানমন্ত্রী আরো যোগ করেন, অথচ বিরোধী দলে থাকা বিএনপি জাতীয় সংসদে বসে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সমালোচনা করে এই বলে যে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা ভাল নয়, কারণ, বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না। যে কারণে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই বিএনপি উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশ এই বাংলাদেশকে আবারো খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিনত করে। এক ইউনিটও বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে ফেলে।