হ্যাঁ পুলিশ মানেই ঘুষ। পুলিশ মানেই অন্যায়, অবিচার, আতংক। নিন্দুকেরা তাই বলে ! দেশে দুই লক্ষ্যাধিক পুলিশ সদস্য আছে। তার মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার সদস্য সরাসরি জনগনের নিরাপত্তায় আইন -শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত আছে। তারা হল থানা ফাঁড়িতে নিয়োজিত সন্মানিত (আমার দৃষ্টিতে)পুলিশ সদস্য গন।
আর অন্যরা হল পুলিশ লাইন্স, এসবি, সিআইডি সহ বিভিন্ন অফিসে কর্মরত । তারা কেউ কেউ থানা পুলিশকে সহযোগিতা করে আবার কেউ কেউ থানা পুলিশের কাজ মনিটরিং করে থাকেন।পুলিশ লাইন্সে কর্মরত পুলিশ সদস্যগনকে বিশেষ পরিস্তিতি ছাড়া সিডিউলের বাহিরে ডিউটি করতে হয় না। তারা কোন দিন ১২ ঘন্টা কোনদিন ০৮ ঘন্টা আবার কোন দিন ডিউটি ই হয় না, শুধু রোল কল(হাজিরা)দিতে হয়।তাদের কাছেই থানা পুলিশ মানেই টাকার মেশিন। অফিসে কর্মরত পুলিশ সদস্যগন: তারাতো আছেন রাজকীয় হালে(থানা পুলিশের তুলনায়)।তারা সকাল ০৯/১০টায় অফিসে যায় আবার বিকাল ০৫টায় অফিস ত্যাগ করেন। কেউ কেউ আবার রাত ০৮—১০টা অফিস করেন। শুধু তাই নয় অন্যান্য অফিস আদালতের মত শুক্র-শনিবার ছুটি ও ভোগ করেন। তাদের কাছে ও থানা পুলিশ মানেই ঘুষখোর। এতো গেল থানা পুলিশ সংক্রান্তে সম পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের ধারনা।
সিনিয়র অফিসার তো মনে করেন থানার দারোগা (এসআই/এএসআই) প্রত্যেকটা হচ্ছে চোর,ডাকাত, ছিনতাইকারী, নারী ধর্ষক সর্বোপরি ঘুষ খোর একটা নেক্কার জনক প্রাণী।
হ্যাঁ আমি ঘুষ নেই। কিন্তু কেন নেই? তা কি কেউ কখনো ভেবেছেন ? এর প্রতিকার করার চেষ্টা করেছেন সিনিয়র অফিসারগণ ? না তা করেন নি।
থানায় নিয়োজিত একজন পুলিশ সদস্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ ঘন্টা সিডিউল ডিউটি করেন। তাতে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু ডিউটিতে ব্যবহৃত যানবাহনের ভাড়া/জ্বালানী খরচ ডিউটিতে নিয়োজিত এসআই/এএসআই (দারোগা) কেই বহন করতে হয়। কেননা থানায় সরকারী গাড়ী থাকে একটি, আর ডিউটি বের হয় ৫/৬ টি দল। অন্য দলগুলোর ইনচার্জ(এসআই/এএসআই) গাড়ির ভাড়া/জ্বালানী খরচ দিবে, এটিই নিয়ম। এ তো হল সিডিউল ডিউট। এর বাহিরে হল দারোগার ব্যক্তিগত কাজ। হা-হা- হা ভাবছেন বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঘুরতে যাবে; এ তো বছরে একদিন ও কল্পনা করা যায় না। থানার দারোগার ব্যক্তিগত কাজ হল- মামলা তদন্ত, মামলার আসামী গ্রেফতার করা, ভিকটিম উদ্ধার করা, আাদালতের আদেশ পালন করা, সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশ পালন করা, ওয়ারেন্টের আসামী গ্রেফতার করতঃ কোর্টে পাঠানো, চোর-ডাকাত গ্রেফতার করা, মাদক উদ্ধার করা। একজন আসামীর তথ্য সংগ্রহ করে তাকে গ্রেফতার করে কোর্ট পর্যন্ত পৌছাতে কম পক্ষে ১০০০-১২০০ টাকা খরচ করতে হয়। কোন কোন সময় আরো বেশী খরচ করতে হয়।আর এসকল কিছুই করতে হবে দারোগার নিজের টাকায়। কেননা এগুলো হচ্ছে দারোগার ব্যক্তিগত কাজ। এর জন্য সরকার বা কর্তৃপক্ষ কোন টাকা দিবে না। তবে একজন দারোগাকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৭-১০ জন আসামী গ্রেফতার করার নির্দেশ কিন্তু কর্তৃপক্ষ ঠিক-ই দিবে। ভাবছেন সমস্যা কি? এটা তো পুলিশের কাজ; না, ভুল ভাবছেন। এটা পুলিশের কাজ না। এটা শুধু মাত্র থানার দারোগার কাজ। আর এ কাজ গুলো করতে হবে সিডিউল ডিউটির পর যখন তাদের অবসর অর্থাৎ বিশ্রাম নেওয়ার কথা তখন। তাদের নেই কোন বিশ্রাম, নেই কোন ঈদ আনন্দ, নেই কোন বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, আন্তীয়-স্বজন।
এলাকায় কোন চুরি-ছনতাই হলে জবাব দিতে হবে দারোগাকে। কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলে জবাব দিতে হবে দারোগাকে। কোন মেয়ে প্রেম করে পালিয়ে গেলে জবাব দিতে হবে দারোগাকে ই।
এত জবাবদিহীতার প্যারা মাথায় নিয়ে সু-চারু ভাবে দায়িত্ব পালন করা রোবটিক মানুষটিই হচ্ছে থানায় নিয়োজিত পুলিশের দারোগা।
ঠিক যেন মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নিয়োজিত ““জাহান্নামের প্রহরী দারোগা মালেক।তবে সুখবরের বিষয় হচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের আইজিপি মহোদয় দারোগাদের কষ্ট কিছুটা প্রতিকার করার চেষ্টা করছেন।
লেখক:
জাহাঙ্গীর আলম
সহকারি পুলিশ পরিদর্শক (িএসআই )ি