1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন

৭৩০ টাকায় বিশ্ব ভ্রমণ– আ,ফ,ম আহসান উদ্দিন টুটুল

নাগ‌রিক খবর ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ জুন, ২০২১
  • ৩৮৬ বার পঠিত

৭৩০ টাকায় বিশ্ব ভ্রমণ– আ,ফ,ম আহসান উদ্দিন টুটুল  (পর্ব ১)

বাড়ির সদর দরজা থেকে ৫০০ গজ দূরেই, পশ্চিম পার্শ্বে বিস্তর এলাকা জুড়ে সবুজের সমারোহ। হরেক রকমের গাছগাছালি। সেখানটাতেই রয়েছে পূর্ব-পুরুষদের পারিবারিক কবরস্থান। এ মাটিতে নিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন প্রিয় মানুষেরা। তিন বছর আগে, ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রোববার রাতে এখানকার নতুন বাসিন্দা হয়েছেন আমার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। আমার বাবা আব্দুর রশিদ। তাঁর বুকের ওপর জেগে উঠেছে বেলী ফুল, পাতাবাহার, কাঠবাদাম আর রক্তজবারা। বেলী ফুলের মুহুমুহু গন্ধে পুরো প্রাঙ্গণ জুড়ে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে। দিন দিন যেন এ মাটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। নতুন করে প্রাণ পেয়েছে এখানকার বৃক্ষরাজি, লতাপাতারা।

২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার। কুমিল্লার চাপাপুর গ্রাম। সবুজে মোড়ানো গ্রামে বাবার গড়ে তোলা ভিটায় বহুকাল পরে জানালার গ্রীল গলে আসা ভোরের আলো দেখেছি। অপূর্ব সেই আলো। হঠাৎ বাউন্ডেলে এই আমাকে দেখে সেই প্রকৃতিও যেন হাস্যরসে মেতে উঠেছিল। খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছিল সূর্য মামা। সেইদিন দুপুর গড়িয়ে বিকেলেই দেশ ছাড়বো। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একজন হয়ে যোগদানের জন্যই এ যাওয়া। বিপত্তি বাধে অর্থসঙ্কট। যদিও কোনোভাবেই আমি মনোবল হারায়নি। তাছাড়া, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির পকেটে টাকা নেই- এ কথাও যে অনেকের কাছে অবিশ্বাসযোগ্য! ক্রেডিট কার্ড আভিজাত্যের প্রতীক হলেও সেইসময়ে ৩৫ হাজার টাকা ছিল মাত্র! ১৫ হাজার টাকার জন্য কার্ডে থাকা টাকাটাও আর তোলা হলো না। কারন ৫০ হাজার টাকা ছাড়া কার্ড থেকে টাকা উত্তলন সম্ভব নয়। কী আর করা! মানিব্যাগ ঘেটে ঘুটে পাওয়া গেল ২৩০ টাকা। এই আমার সম্বল।

মানুষ স্বপ্নে বাঁচে। নিজের মাঝে আশা জাগায়। আমিও স্বপ্নবিলাসী। তাই পকেট ফাঁকা হলেও ঘর থেকে বেরোনোর আগে বিশাল দুইটা লাগেজ সঙ্গী করে নিলাম। যদিও ভেতরে হাতে গোনা কয়েকটা পোষাক। ঘর থেকে বের হবার আগে মায়ের দোয়া নিতে ভুলিনি। কারন জীবনের বড় শক্তি মা-বাবার দোয়া। যখন মায়ের পা ছুঁয়েছিলাম, মাথা তুলতেই পাঁচশ টাকা ধরিয়ে দিলেন। কী ভেবে দিলেন, বুঝে ওঠার আগেই মায়ের উত্তর- ‘হাতে রাখো, কাজে লাগতে পারে’। চার ভাই-বোনের মধ্যে আমি তৃতীয়। রাজনীতি করার সুবাদে সর্বক্ষণ মা, আমাকে নিয়েই ভাবেন। তাই মায়ের এমন ভালোবাসা বরাবর পেলেও ওইদিনের ‘পাঁচশ টাকা’ চাঁদের টুকরো হাতে পাওয়ার মতো মনে হয়েছিল। অবশেষে মায়ের দোয়া আর শয্যাশয়ী নানীকে দেখে ঘর থেকে বের হই।

জীবদ্দশায় বাবা প্রায়ই বলতেন- ‘আমি না থাকলে বুঝবিরে পুত।’ আমি এখন প্রতিটা মুহূর্তে টের পাই বাবার অস্তিত্ব। প্রধানমন্ত্রীর সফর বহরে তাঁর দুরন্তপনা ছেলেটা আছে- দেখতে পেলে কতই না খুশি হতেন! আজ বাবা নেই। কিন্তু এ বিশ্বাস আছে, বাবার দোয়া সর্বত্রই, সকল ক্ষেত্রে ছায়া হয়ে আমার পাশে থাকেন।

ঘর থেকে বের হয়ে গ্যারেজ থেকে চলার সঙ্গী “প্রাইভেট কার”টি নিয়ে সোজা চলে যাই বাবার কবরে। মূল সড়কে গাড়িটা রেখে বাবার কবরের কাছাকাছি যাই। কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। বাবাকে জানালাম- তাঁর ছেলে আজ বিদেশ সফরে যাচ্ছে। দোয়াও চাইলাম। প্রকৃতিতে তখন মৃদু বাতাস বইছিল। হয়তো সেই বাতাসেই বাবা ভর করে মিশে গেছেন আমার গায়ে।

বাবার দোয়া নিয়ে মিনিট কয়েক পরেই প্রাইভেট কারের কাছে যাই। ভোর যেন আমার ক্ষেত্রে অবেলা। তাইতো, এলাকার মুরুব্বীদের মধ্যে কানাঘোষা শুরু হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেই- ‘আজ বাইরে যাচ্ছি।’ সবার কাছে বিদায় নিয়ে সকাল ৮টা কিংবা সাড়ে ৮টায় রওনা দেই কুমিল্লার লাকসাম রোডস্থ রয়েল কোচ কাউন্টারের উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছানোর পর সঙ্গী প্রাইভেট কারটি রেখে ঢাকার অভিমুখে বাসে চড়ি। বাস ভাড়া দিতে হয়েছে ২৫০ টাকা। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাই কমলাপুর বাসস্ট্যান্ডে।

মায়ের দেওয়া পাঁচশ টাকা আর মানিব্যাগে পাওয়া ২৩০ টাকার মধ্যে বাকি হাতে রইল ৪৮০ টাকা। আনমনেই ভেবে চললাম, সিএনজি করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে আড়াইশ কিংবা তিনশ টাকা শেষ হয়ে যাবে। তার চেয়ে ভালো, ট্রেনে চড়ে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যাওয়া। যেই ভাবনা, সেই কাজ। লাগেজটাকে টেনে নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে যাই। দাঁড়িয়ে থাকা একটা ট্রেনেও উঠে পড়ি। আগে বিনা ভাড়াতেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যেতাম। আর সেইদিন মন থেকেই চেয়েছি ভাড়া দিয়েই ট্রেনে চড়বো। টিটির কাছে আমার সহজ স্বিকারোক্তী- ‘সময় ছিল না, তাই টিকিট কাটতে পারি নাই। কত, বলেন’। টিটি চাইলেন ২০ টাকা, আমিও তাই দিয়ে দিলাম। ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই বিমানবন্দর রেলস্টেশনে পৌঁছে গেলাম।

হাতে তখনও অফুরন্ত সময়। এদিকে, কাজের চাপে সময় মিলেনি বিধায় লম্বা হয়ে ওঠা দাড়িগুলো কাটা হয়নি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে একটু পরিচ্ছন্ন হওয়ার প্রয়োজন বলে, মনে করি। তাই আশেপাশে সেলুন খোঁজার চেষ্টা করলাম। পেলাম না। তাছাড়া, নামিদামি সেলুনে ঢুকলে হাতে থাকা অবশিষ্ট টাকাটাও খরচ হয়ে যাবে। ভেবেচিন্তে রাস্তার ধারেই ঝুপড়ি সেলুনে বসে পড়লাম। হালকা দাড়ি কেটে দিলেন নাপিত। বিনিময়ে তাকে দিতে হল ৩০ টাকা। সবশেষে হাতে রইল ৪৩০ টাকা।আ/স।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com