ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ আইনি পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েই এই কথা জানানো হয়েছে। দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রে একটি কার্টুন প্রকাশিত হবার পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা হেয় প্রতিপন্ন না হয় সেজন্য’ এই সিদ্ধান্ত।
এই খবর পাঠ করেই আমার স্মরণ হল যে, আর কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী। একশ’ বছরের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিজ্ঞপ্তি হচ্ছে তার একটি উদাহরণ।
যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার উপাচার্য সামান্য ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সহ্য করতে পারে না, সেই প্রতিষ্ঠান কী করে শেখাবে সহিষ্ণুতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার? একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারকেই না সহ্য করতে পারে তবে বিশ্ববিদ্যালয় শেখাবে কি? একটি বিশ্ববিদ্যালয়, আসলে যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান – এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও, কেবল ক্লাশরুমের চার দেয়ালের মধ্যে শেখায় না। সবচেয়ে বড় কথা, নাগরিকের করের অর্থে চলা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নাগরিকরা কিছু বললে তার জন্যে ‘আইনি’ ব্যবস্থার হুমকি তো পাকিস্তানী আমলে ষাটের দশকেও শোনা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কি কিছুই অর্জন নেই? অবশ্যই আছে। কিন্ত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত বলে দিচ্ছে যে, কর্তৃপক্ষের অবস্থান কী।
কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভাবমূর্তি’ নিয়ে উদ্বিগ্ন, যেন ‘ভাবমূর্তি’ একটা বায়বীয় বিষয়। ভাবমূর্তি তৈরি হয় আচরণ দিয়ে, কর্মকাণ্ড দিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে কথিত ‘গণরুমে’ শিক্ষার্থীরা অস্বাস্থ্যকর ও অমানবিকভাবে জীবনযাপন করে, তাঁদের ওপরে নির্যাতনের ঘটনার কথা জানা যায়, তাঁদের বাধ্য করা হয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের হয়ে কাজ করতে, এই রকমভাবে প্রাণ সংহার হয় শিক্ষার্থীর – এইসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কোথায় যায় তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ নেই।
উদ্বেগ নেই এই নিয়েও যে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় বরাদ্দ খুব সামান্য – মোট ব্যয়ের ৫ শতাংশের মতো। আর সেই বরাদ্দ করা অর্থও ব্যয় করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সক্ষম হয় না। ২০১৯-২০ সালে বরাদ্দ করা ৪০ কোটি টাকার মধ্যে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিলো। অথচ ২০১৯-২০২০ সালে বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় কমানো হয়েছিলো।