উত্তরা বোট ক্লাবের পরিচালক নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও ঢালিউডের নায়িকা পরীমনি কাণ্ডে এখন আলোচনায় আদম ব্যবসায়ী তুহিন সিদ্দিকী অমি। বলা হচ্ছে, নায়িকা পরীমনিকে বোট ক্লাবে নিয়ে যান এই অমি। এর আগে আরও দুই নায়িকা অমির ফাঁদে পড়ে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। অন্তরঙ্গ ছবি ধারণ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছিল অমি।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তরার মাফিয়া জগতের বড় নিয়ন্ত্রণ ছিল অমির হাতে। মাদক ব্যবসা ও নারী পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল অমি। নিজের ব্যবসায়িক কাজ হাসিল করতে সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করতো। নারীদের নিয়ে যেত দেশের বাইরেও।
অর্থ ও দামি গিফটের মাধ্যমে অনেক নায়িকা, মডেলকে নিজের আয়ত্বে নিতো অমি। এরই ধারাবাহিকতায় দুই নায়িকাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিল তুহিন সিদ্দিকী অমি। ওই দুই নায়িকার মধ্যে একজন বাংলাদেশের ঢালিউডের সেনসেশন, হট মডেল এবং ওপার বাংলায়ও সমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তিনি আর কলকাতায় যাননি। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট আরেকজনকে তিনি বিয়ে করলেও তার আর সংসার টেকেনি।
আরেকজন নায়িকা, যিনি তিনটি ছবি করেই আলোচিত। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি নির্মাণ করে বিখ্যাত হওয়া একজন প্রয়াত পরিচালকের হাত ধরে রুপালি পর্দায় আগমন ঘটেছিল তার। তবে তিনি এখন চলচ্চিত্রে নিয়মিত না।গত পাঁচ বছর ধরে তার কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তিনি সংসার করছেন।
চার বছর আগে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির একজন দাপুটে পরিচালকের সঙ্গে ধানমণ্ডির একটি রেস্টুরেন্টে পরিচয় ঘটে অমির। ওই পরিচালক ঢাকার সিনেমা পাড়ার ব্যাপক আলোচিত এক নায়কের ঘনিষ্ঠ। আলোচিত এক নায়কের সংসার ভাঙার জন্য ওই পরিচালককে অনেকে দায়ী করে থাকেন। মূলত অমির সঙ্গে দুজন নায়িকার পরিচয় করিয়ে দেন ওই পরিচালক। সূত্র জানায়, এক নায়িকাকে অমি গত বছরে ঢাকার একটি ক্লাবে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন তার পরিচিত দুই ব্যক্তি।
সেখানে ওই নায়িকাকে বিব্রতবোধ করেন। এক পর্যায়ে চলে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাধা দেন অমি। ক্লাবেই বিশেষ কৌশলে দুজনের অন্তরঙ্গ একটি ছবি তোলে অমি। এরপর থেকে ওই ছবি দেখিয়ে নায়িকাকে বিভিন্নভাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। পরে ওই নায়িকা কৌশলে তার হাত থেকে রক্ষা পান।
চলচ্চিত্র শিল্পের আরেকজন নায়িকাকে এমনভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিল অমি। পরে ওই নায়িকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানোর হুমকি দিলে অমি তার পথ থেকে সরে যায়। সূত্র জানায়, ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য না হলেও সেখানে নিয়মিত যাতায়াত আছে এক আলোচিত নায়িকার। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রমোদ ভ্রমণে যান। চিত্রনায়িকা ওই পরিচালকের সঙ্গে চার বার বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণে গেছেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা সর্বশেষ নেপালে গিয়েছিলেন।কিন্তু এখন তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক নেই। তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়ে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
চিত্রনায়িকা পরীমনির গুলশানের একটি ক্লাবে ভাঙচুর ছাড়াও একাধিক অভিযোগ এসেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। বিশেষ করে উত্তরার বোট ক্লাবের ঘটনায় পরীমনি এবং নাসির উদ্দিন মাহমুদ একে অপরকে দায়ী করেছেন। সেখানে আসলে কী ঘটেছিল, তা তদন্ত করছে পুলিশ। গত রোববার নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে পরীমনি জানান, উত্তরার বোট ক্লাবে তাকে হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় গত সোমবার সকালে সাভার থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন তিনি। মামলায় তিনি উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং ঢাকা বোট ক্লাবের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয়জনকে আসামি করেন। পরে গত সোমবার পুলিশ উত্তরা এক নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের একটি বহুতল বাসায় মাদকসহ নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতের আদেশে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ অন্যদের এখন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নাসিরের মাদক মামলার প্রধান সমন্বয়কারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মো. মশিউর রহমান গতকাল জানান, প্রতিটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, মাদক মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং অমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তিনি দাবি করেছেন যে, পরীমনি তাকে ক্লাবে গিয়ে গ্লাস ছুড়ে মেরেছে। পরীমনির লোকজন তাকে মারধর করে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। অপরদিকে পরীমনি অভিযোগ করেছেন যে, নাসির তাকে আঘাত করেছেন। ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছেন। সেখানে কার কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখছে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।