মহামারী করোনার টিকা আমদানিতে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এবারও ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। টিকা সংগ্রহে চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। মহামারীকালে গতবারের মতো এবারও স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গবেষণা খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে এই বরাদ্দ রাখার কথা বলেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মহামারী করোনার হাত থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষ করোনার টিকা পাবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ উন্নত ৬টি রাষ্ট্রের করোনার টিকা দেশে ব্যবহার করা হবে। ইপিআই ও সিডিসি’র (কম্যুনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল) সমন্বয়ে এ ভ্যাকসিন কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এলক্ষ্যে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার মহান সংসদে অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপন করেন।বাজেট বক্তৃতায় মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী দেশের সকল মানুষ বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। এজন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহে যত টাকাই লাগুক না কেন সরকার তা প্রদান করবে। সে লক্ষ্যে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি বাজেটের ন্যায় প্রস্তাবিত বাজেটেও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরী চাহিদা মেটানোর জন্য পুনরায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথম প্রাদুর্ভাবের পর বছর ঘুরে এলেও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ভয়াবহ প্রকোপ এখনও বিদ্যমান রয়েছে। কাজেই বিগত বাজেটের মতো এবারও অঙ্গীকার করছি এ মহামারী মোকাবেলায় যা করণীয় তার সবকিছু করা হবে। আর সে কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ভ্যাকসিনেশন কৌশল ও পদক্ষেপ ॥ কোভিড-১৯ মহামারী হতে জনজীবনের সুরক্ষায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর (ইপিআই) আওতায় ন্যাশনাল ডিপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড ভ্যাকসিনেশন প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে। উন্নতমানের টিকা সংগ্রহে ৬টি সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ কোভিডশিল্ড ভ্যাকসিন ক্রয় করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি হতে দেশের জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ, তথা ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এর মধ্যে ১ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। চীন ও রাশিয়ার সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার কোম্পানি ও ফ্রান্স-বেলজিয়ামভিত্তিক সানোফি-জিএসকে এর নিকট হতে ভ্যাকসিন ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। চীন হতে সিনোফার্ম ও রাশিয়া হতে স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন ক্রয় ও প্রয়োজনে বাংলাদেশে তা উৎপাদনের লক্ষ্যে আলোচনা বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মুস্তফা কামাল বলেন, ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার ৭০ লাখ ডোজ কোভিডশিল্ড ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছেছে এবং ভারত ও চীন সরকার যথাক্রমে ৩২ লাখ ডোজ এবং ৫ লাখ ডোজ ফাইজার যার ১ লাখ ৬২০ ডোজ বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে প্রদান করেছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক হতে কোভিড-ভ্যাকসিন কেনার জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য ১৪.৮৭ মিলিয়ন ডলার ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভ্যাকসিন কেনার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়ার লক্ষ্যে ঋণচুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং এআইআইবি হতে ভ্যাকসিন কেনার সহায়তা চাওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে দেশের মানুষ। এ কারণেই কোভিড-১৯ এর প্রভাব বিবেচনায় এবারের বাজেটে প্রাধান্য পাবে দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা।
দেশের সকল মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের মাধ্যমেই অর্জিত হবে ২০৩০ এসডিজি অর্জিত হবে, এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ এবং ২১০০ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যসমূহ। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের ৮০ ভাগ মানুষ করোনার টিকা পাবেন। ১ হাজার ৫টি ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের মাধ্যমে গত ৩১ মে পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে।