বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনির্ধারিত কয়েকটি বিষয়ে কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছে। গত শনিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় উঠে আসে। সভার এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনাসভাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি বিষয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সভার এক পর্যায়ে কর্মসূচি নির্ধারণ করতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার দিনকে এক প্রভাবশালী সদস্য মৃত্যুবার্ষিকী বলে উল্লেখ করায় উত্তেজনা তৈরি হয়, যা প্রায় বৈঠকজুড়েই চলে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে সাম্প্রতিক নানা ঘটনা, দল হিসেবে বিএনপির সঠিক দায়িত্ব পালন না করার বিষয়টিও।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপির উদ্যোগে ভার্চুয়াল
আলোচনার আয়োজন করা হয়। ওই কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী তিন সদস্যকে প্রথমে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠান শুরুর মুহূর্তে ওই তিন নেতাকে আলোচনাসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। গত এপ্রিল মাসে সরকার লকডাউন ঘোষণা করলে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। কিন্তু রোজিনা ইসলাম গ্রেপ্তার হলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, নারীনেত্রী নিপুণ রায়চৌধুরী ও সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে মহিলা দলের উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করা হয়। এই কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বৈঠকে এক নেতা বলেছেন, লকডাউনে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। রোজিনা ইসলামের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতেও কর্মসূচি করা উচিত। এ সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যের রেশ ধরে দায়িত্বশীল এক সদস্য বলেন, সাংগঠনিক কর্মসূচি স্থগিত করায় বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যায়ে এক নেতা বলেন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত আছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি তো স্থগিত নয়। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে শুধু বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব পালন শেষ হয়ে যায় না। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে প্রেসক্লাবে কর্মসূচি করতে পারলে নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে পারব না কেন?
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নির্মমভাবে নিহত হন। তারপর থেকে জিয়াউর রহমানের নামের আগে ‘শহীদ’ এবং নিহত তারিখে ‘শাহাদাতবার্ষিকী’ পালন করে আসছে। কিন্তু গত শনিবার স্থায়ী কমিটির সভায় দলের গুরুত্বপূর্র্ণ এক নেতা ৩০ মে উপলক্ষে কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মৃত্যুবার্ষিকী বলেন। দলের স্থায়ী কমিটির অন্য এক নেতা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ করেন। দলের আরেক সিনিয়র নেতা প্রতিবাদকারী নেতাকে সমর্থন দিয়ে বলেন, আমরা তো জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী পালন করি, মৃত্যুবার্র্ষিকী নয়। এর পর ওই নেতা শাহাদাতবার্ষিকী বলতে বাধ্য হন। এখান থেকেই শুরু হয় স্থায়ী কমিটিতে উত্তেজনা।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, জিয়াউর রহমানের নিহতের দিনটিকে পালন করতে প্রথমে দুই দিনের কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করেন দুই-এক নেতা। স্থায়ী কমিটিতে সেই অনুযায়ী প্রস্তাবও দেওয়া হয়। এ বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বাদানুবাদ হয়েছে সভায়।
বৈঠকে এক নেতা বলেন, ‘রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরউত্তম জিয়াউর রহমানের এবার ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী। তাই চল্লিশ দিনের কর্মসূচি নেওয়া উচিত।’ এ সময় এক নেতা বলেন, এতদিন কর্মসূচি কীভাবে করা সম্ভব? তখন প্রস্তাবকারী নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যদি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য বছরব্যাপী কর্মসূচি করতে পারে আমরা কেন পারব না? এ সময় এক নেতা প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ১৯৭৮ সালের ৩ জুন সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। দলের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কমিটির উদ্যোগে এই কর্মসূচি করা যেতে পারে। পরে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। এর দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭৮ সালের ৩ জুন প্রথমবারের মতো সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জিয়াউর রহমান। এর আগে সিস্টেমটা ছিল পার্লামেন্ট থেকে নির্বাচন। এ বিষয়টি সামনে এনে কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।