করোনা আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তার দল ও পরিবার। সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের অনুমতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তারা। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার বিষয়ে আলাপ করেন। কিন্তু স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিষয়ে সরকারের অন্যান্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে এমন আশ্বাস দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছকু বিএনপির একজন নেতা বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে সরকাররের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এখন চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আজকে সন্ধ্যার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানান। একইসঙ্গে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে সরকারের অনুমতির বিষয়ে কথাও বলেন।বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বুধবার বেলা ১১ টায় বিএনপির একটি ভার্চুয়াল আলোচনা আছে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী। আর এই সভায় তিনি খালেদা জিয়ার বিদেশ নেয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্যও রাখবেন।
এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়া সোমবার ভোর থেকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। পরে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে এদিন বিকাল পৌনে চারটায় তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বেগম জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা বিষয় জানাতে সোমবার সন্ধ্যায় মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আপনারা জানেন বেগম খালেদা জিয়া নিয়মিত চিকিৎসার জন্য এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্ববধানে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা তত্ত্ববধান করছেন। আজ (সোমবার) ভোরের দিকে ওনি একটু শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। শ্বাসকষ্ট অনুভব করার পর চিকিৎসকরা তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন।পরে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তক্রমে করোনা কেয়ার ইউনিট সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয় তাকে। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। আমরা দেশবাসীর কাছে ওনার রোগ মুক্তির জন্য দোয়া চাই।
এক প্রশ্নে জাবাবে ডা. জাহিদ বলেন, মানুষের যেকোন সময়, যেকোন পরিস্থিতিতে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ম্যাডামের সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। চিকিৎসকরা সম্মিলিতভাবে এই পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো করছেন।
বেগম জিয়া এখন কেমন আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনারী কেয়ার ইউনিটে যখন কোন রোগী থাকে তখনতো স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসই নেয়। আমি কয়েক মিনিট আগে ওনার সঙ্গে দেখা করে আসছি। কথা বলে আসছি। এর আগে রোববার রাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড বৈঠকে বসে। আগে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তা নিয়ে মেডিকেল বোর্ড পর্যালোচনা করে। পরে তারা নতুন কিছু পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন।
গত ১০ই এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় বারের মতো খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট হলেও ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর ২৭শে এপ্রিল তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়।