চলমান লকডাউনের মধ্যে আজ রোববার থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন শপিংমল ও বিপণী বিতান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব দোকান ও শপিংমল খুলে দেওয়া যাবে বলে গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এদিকে, দোকান ও শপিংমল খোলার খবরে শুক্রবার থেকেই রাজধানীমুখি মানুষের ভিড় বেড়েছে। দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে দলে দলে মানুষ ঢাকায় আসছে। পুরান ঢাকার ঘাটগুলোতেও ঢাকামুখি মানুষের ভিড় দেখা গেছে। অন্যদিকে, আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা আছে। এসময় বাইরে বের হতে পুলিশের মুভমেন্ট পাস নেওয়ার কথা বলা আছে। আজ মার্কেট খুলে গেলে সেই নিয়ম কি বলবৎ থাকবে? পুলিশ সদর দফতর বলছে, এই সময়ে মার্কেটে যেতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের লাগবে মুভমেন্ট পাস। যদিও শপিংমল খোলার বিষয়ে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়ে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এদিকে সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে চিরচেনা রুপ হারিয়েছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। জরুরী সেবা বাদে সব ধরনের সেবা বন্ধ ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। অলস সময় ঘাটে কাটিয়েছে ফেরিগুলো। দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার ঘোষণাতে দৌলতদিয়া ঘাটে বাড়তে শুরু করেছে ছোট গাড়ি ও যাত্রীর চাপ। গতকাল শনিবার বেলা ৩ টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটের ৫ নং পল্টনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট গাড়ির চাপ বেড়েছে। জরুরী যানবাহন ছাড়া কোন যানবাহন পার করার কথা না থাকলেও একটি ফেরিতে যতগুলো গাড়ি পার হচ্ছে তা সবই ছোট গাড়ী।
মাগুরা থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাড়ি চালক বলেন, আমার মালিকের নিউমার্কেটে দোকান রয়েছে। লকডাউন বন্ধ থাকায় সপরিবারে তারা গ্রামে চলে আসে। কাল মার্কেট খুলবে তাই আজ ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দেখা গেছে, সারা পথ ছোট ছোট যানবাহনে ভিড় সামলে শত শত মানুষ ছুটছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই ছিল না। অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন রাজু। দৌলতদিয়া ঘাটে আলাপকালে তিনি বলেন, সাভারের আশুলিয়া জামনগর এলাকায় তার নিজের পোশাকের দোকান রয়েছে। লকডাউন ঘোষণা হলে তিনি গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। কাল থেকে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত হওয়ায় তিনি ঢাকার দিকে ছুটছেন। কয়েক দিন পরই ঈদ। গণপরিবহন এখনো চালু না হওয়ায় অনেক কষ্টে ভেঙে ভেঙে ইজিবাইকে করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। তবুও ভিড় ঠেলে করোনা ঝুঁকি নিয়েই যেতে হচ্ছে। কারণ, এখন যদি কিছু বেচাকেনা হয়। দোকানের সব কর্মচারীকেও আসতে বলেছেন।
ফেরিঘাটে কর্তব্যরত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডবিøউটিসি) এক টার্মিনাল তত্ত্বাবধায়ক জানান, গতকাল থেকে রাজধানীমুখী মানুষের চলাচল অনেক বেড়েছে। আগে যেখানে দুই ঘাটে দুটি ছোট ফেরি শুধুমাত্র জরুরি গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স পার করার জন্য প্রস্তুত রাখা হতো, সেখানে বর্তমানে মাধবীলতা, হাসনা হেনা, শাপলা শালুক, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা ও বনলতা নামের ছয়টি ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি চলছে। ঘাটে সাধারণ পরিবহন ছাড়া যেসব গাড়ি আসছে, তারাই পার হতে পারছে। পুরান ঢাকার সদরঘাট বন্ধ থাকলেও বাদামতলীসহ সবগুলো ঘাটে নৌকায় চড়ে শত শত মানুষ আসছে ঢাকায়। গতকাল সকাল থেকে মানুষের ঢল দেখা গেছে। আলাপকালে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী সেকেন্দর আলী জানান, দোকানপাট খুলছে। এজন্য তারা কর্মচারিদেরকে ঢাকায় আসতে বলেছেন। ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি। এর মধ্যেই বেচাবিক্রি করতে হবে।
এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দেখা গেছে ট্রাকে, ভ্যানে, প্রাইভেটকারে করে দলে দলে মানুষ ঢাকায় আসছে। কেউ কেউ যানবাহন না পেয়ে কিছু পথ রিকশা, কিছু পথ ইজিবাইক এবং বাকি পথ পায়ে হেঁটেই ঢাকায় আসছেন।