জট লেগেছে ই-পাসপোর্টে। সাম্প্রতিক বছরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনার লকডাউন, এমআরপি’র চেয়ে ই-পাসপোর্টের বেশি আবেদন পড়া, ই-পাসপোর্টের সফ্টওয়্যার, ছবি তোলা, মোবাইলে আবেদন, সঠিক সময়ে আবেদন ডেলিভারি না দেয়া, ফিঙ্গার প্রিন্টে সমস্যা, অধিকাংশ আবেদনকারীর ই-পাসপোর্টের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না জানায় ই-পাসপোর্টে জট লেগেছে। অধিদপ্তরে এখন প্রায় ৫ লাখ ৯০ হাজার আবেদন ঝুলে আছে। এর মধ্যে ৪৭ হাজার ৩০০ টি পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ার কারণে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায়নি পাসপোর্ট।
ই-পাসপোর্টের কারিগরি মান বাড়লেও কর্মীদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। যেসব কর্মকর্তা এবং কর্মচারী এমআরপি পাসপোর্টের কাজ করতেন অধিদপ্তরে তারাই ই-পাসপোর্টের সেবা দিচ্ছেন। এ ছাড়াও বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় প্রযুক্তির বিষয়টি জড়িত। অধিদপ্তর জানিয়েছে, দ্রুত এ সংকট কেটে যাবে।
অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যে, যারা ই-পাসপোর্টের আবেদন করবেন তারা যেন সঠিক তথ্য জেনে আবেদন করেন।এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী জানান, ‘লকডাউনে পাসপোর্ট ডেলিভারিতে সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৬শে মার্চ থেকে পাসপোর্টের সব কার্যক্রম বন্ধ হলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে আবার পুরোদমে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। দেশের ৭০ টি পাসপোর্ট অফিসে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৮০টি দূতাবাস ও মিশনেও ই-পাসপোর্টের সেবা দেয়া হচ্ছে। বিদেশে যারা ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছেন তাদেরও অনেকের আবেদন ঝুলে আছে। তারা দূতাবাস ও মিশনগুলোতে ভিড় করছেন। তাদের কেউ আত্মীয়-স্বজন আবার ভিড় করছেন অধিদপ্তরের অফিসগুলোতে। অধিদপ্তরে এখন মূলত যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, সফ্টওয়্যারের সমস্যা। এর কারিগরি মান উন্নত করার চেষ্টা করছেন তারা। গত বৃহস্পতিবার শাহেদ নামে এক ব্যক্তি পাসপোর্ট অধিদপ্তরে জানান, তিনি চলতি বছরের মার্চ মাসের ২ তারিখে মোবাইলে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। নির্দিষ্ট তারিখে এসে তিনি ছবিও তুলেছেন। কিন্তু, এখন পর্যন্ত তার মোবাইলে ই-পাসপোর্টের এসএমএস আসেনি . পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ই-পাসপোর্টের অনেকে মোবাইল ফোন থেকে আবেদন করেন। এতে সফ্টওয়্যারে সমস্যা দেখা দেয়।
ই-পাসপোর্ট করার জন্য যে সফ্টওয়্যার তৈরি করা হয়েছে তাতে রাজধানীতে যে থানাগুলো রয়েছে সেসব থানার নাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু, পরে বড় থানা ভেঙে নতুন একাধিক থানা করেছেন কর্তৃপক্ষ। সে সব নতুন থানার নাম সফ্টওয়্যারে না থাকায় আবেদনকারী যখন নতুন থানার নাম দিচ্ছেন তখন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ই-পাসপোর্টের কর্মচারীদের। কারণ, সফ্টওয়্যারে একটি ডট বদলানোও কঠিন। সূত্র জানায়, অনেকে আবেদন করার সময় ইন্টারনেট সমস্যা দেখা দেয়। এতে আবেদনে সমস্যা তৈরি হয়। আবার অনেক আবেদনকারী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আবেদন করেন। কিন্তু, সেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের সিস্টেমে প্রবেশ করা যায় না। আবেদনকারী কারও কারও জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা এক স্থানে। কিন্তু আবেদন করেছেন অন্যস্থান থেকে। এছাড়াও ই-পাসপোর্টের মেশিনে বারকোডের প্রিন্টে কালি না পড়ায় সেগুলো মেশিন রিড করতে পারছে না। অনেকের ১০ আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট না হওয়ায় সেগুলো মেশিন রিড করতে না পারায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষ সবার প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন, যেসব আবেদনকারী ই-পাসপোর্টের আবেদন করবেন তারা যাতে কম্পিউটারে আবেদন করেন।
সূত্র জানায়, অধিপ্তরের প্রতিদিন ৩০ হাজার ই-পাসপোর্ট প্রিন্ট দেয়া হচ্ছে। কিন্তু, দিন দিন আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এমআরপি’র সংখ্যা জ্যামিতিক হারে কমছে। সংখ্যা বাড়ার কারণে ই-পাসপোর্টে জট বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রযুক্তিগত ও জনবলের সমস্যা কাটিয়ে ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টা করছে। সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টে যারা আবেদন করেন অনেকেই তাদের এনআইডি’র প্রকৃত ঠিকানা ভুল করে থাকেন। কোনো কোনো গ্রাহক সংশোধিত ঠিকানা দেন না। ই-পাসপোর্টের মেশিন ভুল ঠিকানা গ্রহণ না করার কারণে অনেকের পাসপোর্ট ঝুঁলে আছে। এতে অনেক গ্রাহক অধিদপ্তরের অফিসে এসে ভিড় করছেন। এছাড়াও ই-পাসপোর্ট যারা পাচ্ছেন না তারা দেশের পাসপোর্ট অফিসগুলোতে ভীড় জমাচ্ছে। তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। ই-পাসপোর্টের বিষয়ে জনগণ যাতে সচেতন হয় এজন্য পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।